চুক্তি অনুযায়ী অক্সফোর্ড-অ্যাষ্ট্রাজেনেকার টিকা বাংলাদেশকে না দেওয়ায় ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার উপায় খোঁজার পরামর্শ দিয়েছে সংসদীয় কমিটি।
রোববার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে ভারত থেকে চুক্তি অনুযায়ী টিকা না আসার বিষয়ে আলোচনার পরে কমিটির পক্ষ থেকে এ সুপারিশ করা হয়।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি ফারুক খান বলেন, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতেই সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে একাধিক সোর্স থেকে টিকা আনার পক্ষে মত দিয়েছিল। মাত্র একটা সোর্স থেকে টিকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত কেন হল-তা মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল।
কমিটি সভাপতি বলেন, বৈঠকে কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে-ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট টিকা না দেওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে বলা হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ কমপ্লিট করতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অতিরিক্ত থাকা ভারতীয় টিকা আনা যায় কী না; সেই উদ্যোগ দ্রুততার সঙ্গে নিতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রানেজেকার টিকা দিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে গণটিকাদান শুরু করলেও দুই চালানের পর আর দিতে পারেনি এই টিকা উৎপাদনকারী ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট। ফলে সরকার নতুন করে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ রেখেছে। সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে সরকারের কেনা এবং ভারতের পাঠানো উপহারের টিকা মিলিয়ে এ পর্যন্ত এক কোটি দুই লাখ ডোজ টিকা হাতে পেয়েছে বাংলাদেশ।
সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে অপফোর্ড-অ্যাষ্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা কিনতে গত বছরের নভেম্বরে চুক্তি করে বাংলাদেশ। বেক্সিমকো ফার্মা ওই টিকা সংরক্ষণ ও সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ছয় মাসে তিন কোটি ডোজ টিকা পাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের। জানুয়ারিতে ৫০ লাখ ডোজ ভারতে ব্যাপক সংক্রমণের মধ্যে বিপুল চাহিদা তৈরি হওয়ায় আর বিশ্বজুড়ে টিকার সঙ্কটের কারণে ফেব্রুয়ারির চালানে বাংলাদেশ ২০ লাখ ডোজ হাতে পায়।
ফারুক খান বলেন, কোভিডের ভ্যাকসিন কেন আনা যাচ্ছে না-এটা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে বৈঠকে। তারা চেষ্টার কথা বলেছেন। এই মুহূর্তে একটা সংকটের মধ্যে পড়তে যাচ্ছি। যারা এক ডোজ টিকা নিয়েছেন তাদের দ্বিতীয়বার না পেলে তো হবে না।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জুলাই মাসের দিকে ভারত থেকে টিকা আসবে। যুক্তরাষ্ট্রে কিছু টিকা অতিরিক্ত আছে। তারা সেখান থেকেও আনার চেষ্টা করছে। এছাড়া চীন ও রাশিয়া থেকে টিকা আসবে এবং সেটা হলে সমস্যার সমাধান হবে।
করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরণের অস্তিত্ব বাংলাদেশে পাওয়ার প্রসঙ্গে কমিটি সভাপতি বলেন, ভারতের সাথে লকডাউনটা আরো শক্তিশালি করতে বলা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে বিজিবিকে আরো শক্তিশালী টহল দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
বৈঠক শেষে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত থেকে ভ্যাক্সিন পাবার জন্য জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার সুপারিশ করা হয়। এছাড়া মে মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যে সংসদীয় কমিটিকে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের অবস্থা সরেজমিনে পরিদর্শনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়।
ফারুক খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ, হাবিবে মিলল্গাত ও কাজী নাবিল আহমেদ অংশ গ্রহণ করেন।