বিশ্বব্যাংক ২০১৯-২০ অর্থবছরের বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে পূর্বাভাস দিয়েছে তাতে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ চীনসহ ভারত ও পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ। সংস্থাটির গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাস শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ আভাস দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনটি বুধবার (৮ জানুয়ারি) বিশ্বব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে ২০১৯-২০ অর্থবছরে (৩০ জুন) বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশ হবে বলে আভাস দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী অর্থবছরে তা আরও কিছুটা বেড়ে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে। ২০১৯ সালের ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে বিশ্বব্যাংক।
অবশ্য, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকারের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা আছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ।
বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে চীন, ভারত ও পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক ঘটনা বলে মনে করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বৈশ্বিক নানা সমস্যায় পৃথিবীর বড় বড় অর্থনীতির দেশগুলো এখন কিছুটা শ্লো ডাউন। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনও এগিয়ে চলছে জোর কদমে। অর্থনীতিকে শক্তিশালী রাখতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ জিডিপি প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন তিনি। জায়েদ বখতের মতে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজার অনেক বড়। এখানে এক টাকা আয় বাড়লে অনেক টাকা বেড়ে যায়। সে কারণে বৈশ্বিক সমস্যা থাকলেও বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ছে না।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের মতো ২০২২ সালেও বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে।
ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ উন্নত হওয়ায় এবং অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বাড়ার সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বব্যাংক বলছে, চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে জড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপিতে যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে, এর জেরে তাদের প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা কমে ১ দশমিক ৮ শতাংশ হবে। বিশ্বব্যাংক মনে করে, ভারতে ব্যাংক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে তেমন বিনিয়োগ আসছে না। এই অবস্থা আরও দীর্ঘমেয়াদি হবে। ফলে ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশটির প্রবৃদ্ধির গতি কিছুটা কমে ৫ শতাংশ হবে। তবে পরবর্তী অর্থবছরে তা আবার বেড়ে ৫ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত হবে। আর পাকিস্তানে ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৪ শতাংশ হতে পারে। পরবর্তী অর্থবছরে তা বেড়ে ৩ শতাংশ হতে পারে।
শিল্পনির্ভর ইউরো অঞ্চলেও ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাকটিভিটি’ হ্রাস পাওয়ায় সেখানে জিডিপিতে নিম্নগতি থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে ধীরে ধীরে উন্নতির মাধ্যমে গত বছরের তুলনায় ২০২০ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি কিছুটা দ্রুত হওয়ার আভাস দেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালে বিশ্বে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২ দশমিক ৪ শতাংশ এবং এবার যেটা ২ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ২০২০ সালে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ হবে। ভারত ও শ্রীলঙ্কায় দেশজ বিনিয়োগ ও দেশজ চাহিদা বাড়ায় উৎপাদনও বাড়বে।
কয়েকটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশ ও উন্নয়নশীল দেশ গত বছরের সংকট কাটিয়ে নিজেদের উন্নয়ন ঘটাবে, এই আশা থেকেই বিশ্বব্যাংক প্রবৃদ্ধির এই পূর্বাভাস দিয়েছে। যদিও একই সঙ্গে তারা এ-ও বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং আরও কয়েকটি উন্নয়নশীল দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কিছুটা হ্রাস পাবে। তবে ব্রাজিলের মতো উদীয়মান অর্থনীতির দেশে গত বছরের তুলনায় জিডিপি বাড়বে। মেক্সিকো ও তুরস্কে ২০১৯ সালে প্রবৃদ্ধি প্রায় শূন্য ছিল। এ বছর ওই অবস্থার উন্নতি ঘটা উচিত বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির মতে, ধীরে হলেও আর্জেন্টিনার অর্থনৈতিক অগ্রগতিও হচ্ছে। তবে গত দুই বছরের তুলনায় এবার তাদের প্রবৃদ্ধির গতি কমে যেতে পারে।
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, ইরানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্রম নেতিবাচক গতি এবার থামতে পারে। সেই সঙ্গে ২০২১ সাল নাগাদ দেশটির প্রবৃদ্ধি আবারও অগ্রগতির পথে উঠে আসবে। এছাড়া, পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলে ২০২০ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৭ শতাংশ হবে বলে আভাস দেওয়া হয়েছে। যদিও বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে এই অঞ্চলের শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ চীনের প্রবৃদ্ধিতে কিছুটা নিম্নগতি দেখা দিতে পারে। এ বছর দেশটির জিডিপি ৫ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে। তবে কলম্বিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের জিডিপি বাড়বে।