প্রিন্ট নারায়ণগঞ্জঃ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় ক্লুলেস হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন করে হত্যাকান্ডের প্রধান আসামি সহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১১। ১৭ আগস্ট মঙ্গলবার দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের আদামজী এলাকায় র্যাব-১১ এর সদর দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিক সম্মেলনকে এসব তথ্য দেন অধিনায়ক লে. কর্ণেল তানভীর মাহমুদ পাশা।
তিনি বলেন, ‘গত ২১ জুলাই উপজেলার এশিয়ান হাইওয়ের পাশে ডোবা থেকে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ২৪ জুলাই হাসপাতাল মর্গে গিয়ে নিহতের ছেলে কাজল হোসেন তাঁর বাবার ছবি, পড়নের কাপড় দেখে শনাক্ত করে। নিহতের নাম জাহিদুল ইসলাম (৫০)। এ ঘটনায় কাজল হোসেন বাদী হয়ে ২৫ জুলাই অজ্ঞাত আসামি করে রূপগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।’
তিনি বলেন,‘এ ঘটনায় প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে র্যাবের একটি গোয়েন্দা দল তদন্ত শুরু করে। যার প্রেক্ষিতে র্যাব দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এ হত্যাকান্ডের প্রধান আসামি সহ ৭ সহযোগিকে গ্রেপ্তার করে।
আসামিরা হলো গাইবান্ধা আদর্শগ্রামের গফুর আলীর ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩০), তার সহযোগী পঞ্চগড় মসজিদপাড়া মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে শামীম (৪০), গাইবান্ধা দুর্গাপুর এলাকার ইব্রাহীম খলিলের ছেলে রনি মিয়া টনি (৩০), রংপুর অন্যদানগরের ইব্রাহীম শেখের ছেলে আব্দুল মান্নান শেখ (২২), নাটোর পুটিমারী এলাকার লক্ষর প্রামাণিকের ছেলে সুমন (৩৮), নাটোর গালিমপুর গ্রামের মৃত তাইজ উদ্দিনের ছেলে মামুনুর রশিদ (৩৫), গাজীপুর চান্না বৌবাজার এলাকার মৃত ইয়াছিনের ছেলে মো. হাবিবুল্লাহ (৫২)।
তানভীর পাশা বলেন, ‘প্রাথমিক অনুসন্ধান ও আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ‘গত ১৮ জুলাই অজ্ঞানপার্টি চক্রের মূলহোতা সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে ৯ জনের একটি দল সংঘবদ্ধ হয়। সাইফুলের একজন অন্যতম সহযোগী সহ আরো ৫জনের একটি দল নাটোর থেকে ১টি ট্রাক নিয়ে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা এসে সাইফুলের সাথে মিলিত হয়। ১৯ জুলাই ভোরে নারায়ণগঞ্জ হয়ে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় তারা। ২১ জুলাই দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কুমিল্লার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় তারা অপেক্ষা করে। পরে সাইফুল নিজে যাত্রীসেজে ঈদে ঘরমুখো সাধারণ যাত্রীদেরকে কম টাকায় পরিবহনের আশ্বাস দিয়ে নিহত জাহিদুল ইসলাম সহ তার সঙ্গে থাকা আলম, আরিফ, শরীফুল ইসলাম, সবুজ সহ মোট ৫জনকে কৌশলে ট্রাকে উঠিয়ে নাটোরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। কিছুদূর আসার পর অজ্ঞানপার্টির সদস্যরা পথের মধ্যে শুকনো খাবার ও কোমল পানীয় ক্রয় করে। পরবর্তীতে তারা ট্রাকের সামনে আগে থেকেই ঘুমের ওষুধ মিশানো একই খাবার ও কোমল পানীয় কৌশলে বদলে ফেলে। ট্রাক চলাকালীন সময়ে ভিকটিম জাহিদুল ইসলাম সহ অন্য যাত্রীদের খাইয়ে অজ্ঞান করে তাদের কাছ থেকে সবকিছু লুট করে নেয়। একজন যাত্রী এগুলো না খাওয়ায় তাকে মারধর করে। পরে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা কুমিল্লার দাউদকান্দি ব্রীজ পার হয়ে প্রথমে ৩জন যাত্রীকে অজ্ঞান অবস্থায় রাস্তার পাশে ফেলে তারপর কিছুদূর আসার পর অজ্ঞান না হওয়ায় যাত্রীকে রাস্তার পাশে ফেলে দেয়। সবশেষ রূপগঞ্জের এশিয়ান হাইওয়ের পাশে ঝোপঝাড়ে নিহত জাহিদুল ইসলামকে গড়িয়ে ফেলে দেয়। ঘুমের ওষুধ মিশানো শুকনো খাবার ও কোমল পানীয় খেয়ে অজ্ঞান হওয়া জাহিদুল ইসলামের কাছে টাকা না পেয়ে অজ্ঞান পার্টির প্রধান সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে তার সহযোগিরা কিলঘুষি ও মারধর করে। ওষুধের বিষাক্ত প্রভাব ও প্রচন্ড মারধর করার কারণে জাহিদুল ইসলামের মৃত্যু হয় ধারণা করা যাচ্ছে।
তানভীর মাহমুদ পাশা আরো বলেন,‘অজ্ঞান পার্টির চক্রটি ১২ বছর ধরে ঢাকা সহ সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় একইভাবে যাত্রীদের অজ্ঞান করে টাকা ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে গেছে। তাদের প্রত্যেকের নামে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।’