প্রিন্ট নারায়ণগঞ্জ: কিছুদিন পর পর দল পাল্টানোর অভিযোগ উঠেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইসরাফিল প্রধানের বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও কয়েকবছর পূর্বে সে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। এখন আবার তিনি ওয়ার্ড বিএনপির কমিটিতে নাম লিখিয়েছেন। ইসরাফিল প্রধানের এই দুমুখী আচরণ নিয়ে হাস্যরসাত্মক পরিবেশ তৈরি হয়েছে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনে।
তবে ইসরাফিল প্রধানের দাবি, তিনি এখন কোনো দলেরই সঙ্গে যুক্ত নন। বিএনপির ওয়ার্ড কমিটিতে কিভাবে তার নাম এসেছে তা তিনি নিজেও জানেন না বলে দাবি তার।
অন্যদিকে বিএনপির দাবি, কোনো ব্যক্তি না চাইলে কাউকে জোর করে কমিটিতে পদ দেওয়া যায় না। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের কোনো কমিটি না হওয়ায় ইসরাফিল প্রধান কোনো পদে ছিলেন না। তাই তিনি যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে ছিলেন তা বলা যায় না। আবার আওয়ামী লীগের আরেক নেতা দাবি করছেন, সুবিধাভোগী হওয়ার কারণে ইসরাফিল প্রধান এমনটা করেছেন।
জানা যায়, গত ২৬ মার্চ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির আহবায়ক মাজেদুল ইসলাম এবং সদস্য সচিব ইকবাল হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ৯নং ওয়ার্ড বিএনপির ৭১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিতে অ্যাডভোকেট মো. মাসুদুজ্জামান মন্টুকে সভাপতি এবং মো. মহিউদ্দিন শিকদারকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ৭১ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটিতে ৪৬ নম্বর স্থলে সদস্য পদে রয়েছেন ইসরাফিল প্রধান।
এর আগে ২০১৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর বিকালে নারায়ণগঞ্জের জালকুড়ি হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকা নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমানের পা ছুঁয়ে সালাম করে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন ইসরাফিল প্রধান। তিনি তখন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সদস্য ছিলেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তখন তিনি বিএনপির সমর্থনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন বলে জানা যায়। এছাড়া বিএনপির বেশ কয়েকটি নাশকতার মামলায় আসামি ছিলেন তিনি। আওয়ামী লীগে যোগদান করার পূর্বে কারাভোগও করেছেন একাধিকবার। এদিকে স্কুলের ওই অনুষ্ঠান শুরুর আগে শামীম ওসমানের হাতে ফুল দেন ইসরাফিল প্রধান। পরে শামীম ওসমান ফুল গ্রহণ করলে ইসরাফিল প্রধান শামীম ওসমানের পা ছুঁয়ে সালাম করেন। ওই সময় আওয়ামী লীগ নেতারা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ শ্লোগান তোলেন।
৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোখলেসুর রহমান জানান, আসলে তার রাজনৈতিক চরিত্র নাই। সে রাজনৈতিক আদর্শ লালন করে না, ধারণ করে না। এক কথায় সুবিধাভোগী। সমাজে এক পার্টি থাকে যারা সবার সাথে মিউচুয়াল করে থাকে, তিনি অনেকটা এমনই। এমপি শামীম ওসমানের পা ছুঁয়ে সে আওয়ামী লীগে যুক্ত হয়েছে তা ঠিক। যেমন ফতুল্লার কুতুবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রয়েছে সেন্টু তিনি বিএনপিতে থাকলেও নির্বাচনে নৌকা মার্কা নিয়ে অংশগ্রহণ করেন।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সদস্য সচিব ও নাসিক ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন জানান, কেন্দ্র থেকে আমাদের তদবির করলো ইসরাফিলের নামটা যেনো কমিটিতে থাকে। ইসরাফিল যদি কেন্দ্রে তদবির না করে তাহলে কি এমনে এমনেই কমিটিতে নাম আসে? আমি যদি না বলি তাহলে কেউ তো আমাকে জোর করে বিএনপিতে পদ দিতে পারবে না।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান জানান, তিনি যেদিন শামীম ওসমানের পা ছুঁয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন সে মঞ্চে আমিও ছিলাম। আমার জানামতে সর্বশেষ নাসিক নির্বাচন পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগে ছিল। আমাদের দীর্ঘদিন ধরে কোনো কমিটি হয় নি। তিনি যে আসলেই আওয়ামী লীগ করতো কিংবা কোনো পদে ছিল তা বলতে পারি না। তিনি এখন আবার বিএনপিতে যোগদান করেছেন কিনা তা আমি বলতে পারি না।
নাসিক ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইসরাফিল প্রধান জানান, কে বা কারা আমার নাম দিয়েছে তা আমি বলতে পারি না। আমি এখন কোনো রাজনীতিতেই নেই। আমি অসুস্থ হয়ে বাসায় অবস্থান করছি। শাহ নিজাম ভাইয়ের সাথে আমার যোগাযোগ আছে। কিন্তু অসুস্থতার কারণে জোরালোভাবে কোথাও যাই নি। আমি অসুস্থতার কারণে কয়েকবার চেন্নাই গিয়েছিলাম। কে বা কারা কেনো আমার নাম দিয়েছে তা আমি শিউর না।