রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩০ পূর্বাহ্ন

৫ মাস পেরিয়ে গেলেও শুরু হয়নি ঢাকা-না:গঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল

বিশেষ প্রতিনিধি
  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ৫ মে, ২০২৩
  • ১৮৩ বার পড়া হয়েছে

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধের ৫ মাস পেড়িয়েছে। এর আগে ২০২২ সালে ৪ ডিসেম্বর থেকে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের জন্য এই ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ৫ মাস পেরিয়ে গেলেও কবে নাগাদ এই রুটে ট্রেন চলাচল চালু হবে তা কেউ নিশ্চিত করতে পারছেন না। এর আগে, গত চার মাস আগে নারায়ণগঞ্জে এসে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছিলেন চলতি বছরের মার্চে শুরু হতে পারে ট্রেন চলাচল। তবে এখনো সম্পূর্ণ শেষ হয়নি প্রকল্পের কাজ।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় এই রুট দিয়ে নিয়মিত চলাচলরত যাত্রীরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জের অধিকাংশ মানুষ রেলপথ এবং সড়কপথে ঢাকায় যাতায়াত করে থাকেন। নারায়ণগঞ্জ শিল্পাঞ্চল অধ্যুষিত এলাকা এবং ঢাকার খুব পাশেই এই জেলা অবস্থিত হওয়ায় নারায়ণগঞ্জের অসংখ্য মানুষ ঢাকায় গিয়ে এবং ঢাকা থেকেও অনেক মানুষ নারায়ণগঞ্জে এসে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এছাড়া ব্যবসা বাণিজ্য সমৃদ্ধ এলাকা হওয়ায় মানুষ বিভিন্ন কারণে ঢাকায় যাতায়াত ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ করে থাকেন। এর ফলে রেলপথ এবং সড়কপথ দুটিতেই সাধারণ মানুষের চাপ থাকতো।

জানা যায়, ১২ দশমিক এক কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয় ১৮৮৫ সাল থেকে। ৪ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার ফলে সড়কপথে যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ বেড়েছে। এর ফলে যানজট আরও তীব্র আকার ধারণ করার আশঙ্কা করেছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ৩০ জুনের মধ্যে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ৩০ জুনের পর থেকে ওই রুটে ভাঙ্গা পর্যন্ত যেন ট্রেন চলতে পারে, সেই লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। ঢাকা থেকে গেন্ডারিয়ার মধ্যে দুটি নতুন ডুয়েলগেজ লাইন নির্মাণ এবং বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা হবে। কিন্তু গেন্ডারিয়া থেকে কমলাপুর পর্যন্ত প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি তুলনামূলক কম। ইউটিলিটি শিফটিং এবং ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ট্রেন পরিচালনা সম্ভব নয় বলে কাজের অগ্রগতি কম। তাই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে ট্রেন বন্ধ রাখতে অনুরোধ করেছে ঠিকাদার। এর অংশ হিসেবে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ করে দ্রুত কাজটি শেষ করতে চায় তাঁরা। পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পের অগ্রগতি সভায় কাজের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানেও বিষয়টি উঠে আসে। সব মিলিয়ে সাময়িকভাবে ট্রেন বন্ধ রাখার ব্যাপারে একমত হয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।

এদিকে এ বছরের ১৪ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জে চাষাঢ়া রেলস্টেশন ও নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনের মধ্যবর্তী লেভেল ক্রসিং গেট টি২ এবং টি১ পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণে ভূমি-সংক্রান্ত জটিলতা সরেজমিনে পরিদর্শনে আসেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে অনেক লোক ঢাকায় আসা যাওয়া করে। এই ডাবল রেললাইন নারায়ণগঞ্জের মানুষের জন্যেই হচ্ছে। এ ডাবল লাইন হলে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০টি ট্রেন চলতে পারবে। এটা হয়ে গেলে নারায়ণগঞ্জের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ ট্রেনে ঢাকায় যেতে পারবে। ঢাকা থেকে পদ্মা লিংক প্রোজেক্টের জন্য ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেল চলাচল বন্ধ রয়েছে। ওই প্রজেক্ট জুন মাসের মধ্যে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত পদ্মা সেতু অতিক্রম করে চলাচলের জন্য উপযোগী করতে পারব। মূল প্রজেক্ট যশোর পর্যন্ত ২০২৪ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি। ফরিদপুরে আমাদের যে পুরনো লাইন রয়েছে সেটার সঙ্গে যুক্ত করার জন্যই আমাদের ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে আমার মনে হয় এক দুই মাসের মধ্যে এ কাজ শেষ হয়ে যাবে। তখন আমরা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন খুলে দিতে পারবো।

নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে প্রতিদিন ১৬ জোড়া ট্রেন চলাচল করতো। নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশন থেকেই প্রতিদিন ১০ হাজার টিকিট বিক্রি হতো। এছাড়া ঢাকার কমলাপুর পর্যন্ত ফতুল্লা, পাগলা, গেন্ডারিয়াসহ আরও পাঁচটি স্টেশন আছে। সব মিলিয়ে দৈনিক ২০ হাজারেও বেশি মানুষ ট্রেনে যাতায়াত করত। ট্রেনে যাতায়াতকারীদের মধ্যে অধিকাংশই চাকরিজীবী ও শিক্ষার্থী। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেনের ভাড়া ছিল ১৫ টাকা।

অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জের যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বির ভাষ্য মতে প্রতিদিন অন্তত ৪০ হাজার মানুষ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেনে যাতায়াত করতেন। সময় ও অর্থ সাশ্রয়ের জন্য ঢাকায় যাতায়াতের জন্য ট্রেনকে বেছে নিতেন যাত্রীরা। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বেড়েছে।

এর আগে গত বছরের ১ ডিসেম্বর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তিনি জানান, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেল লাইনের কাজ কয়েক বছর ধরে চলমান থাকলেও তার অগ্রগতি আশানুরূপ নয়। অন্যদিকে করোনাকালে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে ট্রেনের সংখ্যা যেভাবে কমিয়ে দেয়া হয়েছে তাও আর বৃদ্ধি করা হয় নাই। রেল কর্তৃপক্ষ বার বার বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রক্ষা করা হয় নাই। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে প্রতিদিন প্রায় চল্লিশ হাজারের অধিক মানুষ যাতায়াত করেন। বাসের ভাড়া বৃদ্ধির ফলে ট্রেনকেই সাধারণ মানুষ এখন যাতায়াতের প্রধান বাহন হিসেবে বেছে নিয়েছেন। আজকে মানুষের জীবন-জীবিকা যখন চরম সংকটে, তখন রেলকর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্ত মানুষের সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। আমরা দেশে রেল সেবার আধুনিকায়ন ও উন্নয়ন চাই। কিন্তু জনগণের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে সাড়ে তিন মাসের পরিবর্তে আরও কম সময়ে কাজ সম্পন্ন করার জন্য আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি। আমরা চাই না দেশে অন্যান্য প্রকল্পের মতো এই কাজটি বিলম্বিত হোক। শুরুতেই সে দিকে সতর্ক থাকার জন্য আমরা রেল কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি আহ্বান জানাচ্ছি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চাষাঢ়া রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার শামসুল মো. খাজা সুজন জানান, দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকলেও কবে নাগাদ এই রুটে ট্রেন চলাচল আবার শুরু হবে তা আমার জানা নেই। তবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে শুনেছি, এই মাসের মাঝামাঝিতে এই রুটে আবারও ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে।

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আজকের নামাজের সময়সুচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৫:০২ পূর্বাহ্ণ
  • ১১:৪৭ পূর্বাহ্ণ
  • ১৫:৩৬ অপরাহ্ণ
  • ১৭:১৫ অপরাহ্ণ
  • ১৮:৩১ অপরাহ্ণ
  • ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ
©2020PrintNarayanganj  All rights reserved
Design by: POPULAR HOST BD
themesba-lates1749691102
%d bloggers like this: