প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার কমিউনিটি ভিশন সেন্টারের মাধ্যমে সারা দেশের উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত বিশেষজ্ঞ চক্ষু চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দেবে। এই লক্ষ্যে তাঁর সরকার পর্যায়ক্রমে সব উপজেলায় এই সেন্টার স্থাপন করবে।
শেখ হাসিনা আজ বৃহস্পতিবার সকালে পাঁচটি বিভাগের আওতাধীন ২০ জেলার ৭০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থাপিত ‘কমিউনিটি ভিশন সেন্টার’-এর কার্যক্রম উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আগারগাঁওয়ের জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি অংশ নেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার আধুনিকায়নের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে সমর্থ হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা মনে করি, বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলায় এই সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা আমরা পর্যায়ক্রমে করে দেব। ইতিমধ্যে আরও ১১০টি ভিশন কমিউনিটি সেন্টার স্থাপনের বিষয়েও চিন্তা করছি এবং সে পদক্ষেপও আমরা নিচ্ছি। এর জন্য মনে হয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’
সরকারপ্রধান বলেন, কমিউনিটি ভিশন সেন্টারে কর্মরত দুজন সিনিয়র নার্স উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে বেজ হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে রোগীর যাবতীয় তথ্য প্রেরণ করেন এবং রোগীর সঙ্গে চক্ষু বিশেষজ্ঞদের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আধুনিক চক্ষু চিকিৎসাসেবা প্রদান করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ইতিমধ্যে তাঁর সরকার চক্ষুরোগীদের যেমন চোখে ছানি পড়া, গ্লকোমা বা ডায়াবেটিস, রেটিনোপ্যাথি বা শিশুর চোখে আঘাতজনিত চিকিৎসা, পাওয়ার চশমার ব্যবস্থাপনা সরকারিভাবে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। কমিউনিটি ভিশন সেন্টারের মাধ্যমে প্রায় পাঁচ কোটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে আধুনিক চক্ষুসেবার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অন্ধজনে আলো দেওয়ার চেয়ে বড় কাজ হতে পারে না। অন্ধত্ব মানুষের জীবনকে অর্থহীন করে তোলে। এই চিকিৎসার ফলে তাঁরা সুস্থ হবেন। দেখতে পাবেন। জীবন হবে অর্থবহ। মুজিব বর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আমরা সেবাটা দিচ্ছি।’
বাংলাদেশকে সুস্থভাবে গড়ে তুলতে হলে সুস্থ মানুষ দরকার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জন্মান্ধতা দূর করার জন্য প্রসূতি মাকে চিকিৎসা দেওয়া শুরু করেছি। প্রসবের আগে ইনজেকশন দিয়ে দেওয়া হয়। যার কারণে এখন আমরা ভালো রেজাল্ট পাচ্ছি। জন্মান্ধতা কমে গেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। কৃমির ওষুধ দিচ্ছে। ডিপিটি, বিসিজিসহ বিভিন্ন টিকা দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ, সার্বিকভাবে মানুষ যাতে সুস্থ থাকতে পারে, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ভারতের চেইন অরবিন্দ চক্ষু হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, তারা সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছে। তাদের পরামর্শও কাজে লাগছে। এ জন্য অরবিন্দ চক্ষু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাস ইতিমধ্যে আমাদের দেশের যথেষ্ট ক্ষতি করেছে। যদিও টিকাদান শুরু হয়েছে, তারপরও আমি বলব, মাস্ক পরে থাকা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং কিছুক্ষণ পরপর ভালো করে হাত পরিষ্কার করার যে স্বাস্থ্যবিধি রয়েছে, তা মানতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় টিকাদানের ক্ষেত্রে সবার নাম রেজিস্ট্রেশন করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। টিকাদান কেন্দ্রে শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘টিকা দেওয়ার সময় আমি একটা কথা বলব, প্রত্যেকের নাম রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন করে সেন্টারে যাবেন এবং আপনাদের অপেক্ষা করতে হবে। যখন সময় আসবে, আপনাদের ডাকবে, তখন আসবেন। এখানে কোনোরূপ বিশৃঙ্খলা করবেন না। এ ধরনের ঘটনা অতীতে ঘটেনি। ভবিষ্যতেও যেন না ঘটে, সেদিকে সকলে বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখবেন।’
দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব শিক্ষা-দীক্ষায় ও স্বাস্থ্যসেবায়। মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘৭৫-এর ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পর স্বাধীনতাবিরোধী, খুনি ও লুটপাটকারীরা ক্ষমতায় আসে। যারা এ দেশের স্বাধীনতা চায়নি, তারা দেশের মানুষের জন্য কাজ করবে, এটা আশা করা যায় না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়। পরে ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে এগুলো বন্ধ করে দেয়।
বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যার কারণে আমি ভিডিও কনফারেন্সে আপনাদের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে কথা বলছি। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি। ব্রডব্যান্ড লাইনসহ নানা সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করছি। মুজিব বর্ষে কেউ সেবাবঞ্চিত হবে না। কেউ গৃহহীন থাকবে না। এ জন্য সারা দেশে ঘর করে দিচ্ছি। নদীভাঙাদের ঘর করে দেওয়ার জন্যও আলাদাভাবে বাজেটে ১০০ কোটি টাকা রেখেছি।’
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক সভাপতিত্ব করেন। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তফা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে কমিউনিটি ভিশন সেন্টারের কার্যক্রম ও রেফারেল ব্যবস্থার বিষয়ে একটি তথ্যচিত্রও পরিবেশন করা হয়।
রংপুরের পীরগাছা উপজেলা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল ও ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার কমিউনিটি ভিশন সেন্টারগুলো ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিল। প্রধানমন্ত্রী পরে এসব স্থানের উপকারভোগী জনগণ, জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
সূত্র : প্রথম আলো