প্রিন্ট নারায়ণগঞ্জঃ শোকাবহ ১৫ আগস্ট, জাতীয় শোক দিবস আজ। জাতির পিতা হত্যার সেই কলঙ্কিত দিন। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাতবার্ষিকী।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির ইতিহাসের সবচেয়ে কালিমাময় দিন। রক্তঝরা এই দিনে জাতি হারিয়েছে তার গর্ব, ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে সেদিন ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরে নিজ বাসভবনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার পরিবার-পরিজনকেও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয়েছিল।
কতিপয় বিশ্বাসঘাতক রাজনীতিকের চক্রান্তে এবং সেনাবাহিনীর একদল বিপথগামী উচ্চাভিলাষী সদস্যের বুলেটের আঘাতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সেদিন শাহাদাতবরণ করেন তার প্রিয় সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তিন ছেলে মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল, সেনা কর্মকর্তা শেখ জামাল ও ১০ বছরের শিশু শেখ রাসেল এবং নবপরিণীতা দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল। প্রবাসে থাকায় জীবন রক্ষা পায় বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার।
নৃশংস সেই হত্যাযজ্ঞে আরও প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই আহত মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, শিশু পৌত্র সুকান্ত বাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, নিকটাত্মীয় শহীদ সেরনিয়াবাত ও আবদুল নঈম খান রিন্টু। বঙ্গবন্ধুর জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল উদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা-কর্মচারীও প্রাণ হারান। জাতি আজ গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে এই শহীদদের।
সেদিন খুনিচক্র শুধু বঙ্গবন্ধুকেই নয়, তার সঙ্গে বাঙালির হাজার বছরের প্রত্যাশার অর্জন স্বাধীনতা এবং সব মহতী আকাঙ্ক্ষাকেও হত্যা করতে চেয়েছিল। মুছে ফেলার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল বাঙালির বীরত্বগাথার ইতিহাসকে। অবশ্য খুনিদের সেই ষড়যন্ত্র টেকেনি। জাতি ও বিশ্বমানবের মানসপটে বঙ্গবন্ধু আজও স্বমহিমায় উজ্জ্বল, চিরভাস্বর।
অভিশপ্ত ১৫ আগস্টে বাঙালি জাতির ললাটে যে কলঙ্কতিলক পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তা থেকে জাতির দায়মুক্তি ঘটে দীর্ঘ ৩৪ বছরের বেশি সময় পর- বঙ্গবন্ধু হত্যার চূড়ান্ত বিচারের রায় অনুযায়ী ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি মধ্যরাতের পর কার্যকর হয় পাঁচ খুনির ফাঁসি। এর মধ্য দিয়ে ষড়যন্ত্র ও অবৈধ ক্ষমতা দখলের ঘৃণ্য ও তমসাচ্ছন্ন অধ্যায়ের অবসান এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বাঙালির বিজয়ের অভিযাত্রা আরেক ধাপ এগিয়ে যায়। চলতি বছরের ১২ এপ্রিলের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের একজন ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মাজেদের ফাঁসিও কার্যকর হয়েছে। তবে পুরো জাতি এখনও প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে বঙ্গবন্ধুর বাকি পাঁচ পলাতক খুনির ফাঁসি কার্যকরের।
দীর্ঘ ২১ বছর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার যেমন হয়নি, তেমনি তার শাহাদাতবার্ষিকী পালনকেও রাষ্ট্রীয় ও সরকারি পর্যায় থেকে উপেক্ষা করা হয়েছে। তবে জনগণ বরাবরই স্বতঃস্ম্ফূর্তভাবে বঙ্গবন্ধুকে হারানোর এ দিনটি পালন করে আসছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রথম দিনটিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালনের সূচনা হয়। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এসে দিবসটির রাষ্ট্রীয় মর্যাদা বাতিল করে দেয়। নানা পথপরিক্রমায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার প্রেক্ষাপটে ২০০৯ সাল থেকে দিবসটি আবারও পালিত হচ্ছে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়।
আজ সরকারি ছুটি। সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। বিদেশের বাংলাদেশ মিশনগুলোতেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে