অনলাইন ডেস্ক : ভারতে টিভি-বিতর্কে মহানবী(সা:) নিয়ে বিজেপি-র মুখপাত্র নূপুর শর্মা বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগ। তারপরই শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। মুসলিমদের একাংশ টিভি বিতর্ক বয়কটের কথা বলছেন।
ভারতের অন্যতম প্রধান ইংরাজি নিউজ চ্যানেল টাইমস নাও-তে জ্ঞানবাপী-বিতর্ক নিয়ে আলোচনার সময় মহানবী(সা:)-কে নিয়ে নূপুর শর্মা বিতর্কিত কথা বলেছেন বলে অভিযোগ। সেখানে অল্ট নিউজের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ যুবায়েরও ছিলেন। তিনি ওই বিতর্কের ভিডিও দিয়ে টুইট করে বলেছেন, ”ভারতে প্রাইম টাইম বিতর্ক ঘৃণা-উদ্রেককারীদের মঞ্চ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
এরপর নূপুর শর্মা টুইট করে দিল্লি পুলিশ ও পুলিশ কমিশনারকে সিসি করে অভিযোগ করেছেন, যুবায়ের যে ভিডিও আপলোড করেছেন, তা এডিট করা। তিনি বারবার অন্য আলোচনাকারীদের বলেছিলেন হিন্দু ধর্মের অপমান না করতে। তারপরই তিনি আরেকটি টুইট করে বলেছেন, তাঁকে ও তার পরিবারকে হত্যার হুমকি আসছে। এরকম বেশ কয়েকটি উদাহরণও তিনি সঙ্গে দিয়েছেন। দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, তারা বিষয়টির উপর নজর রাখছেন।
টাইমস নাও এই বিতর্ক থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়ে বলেছে, বিজেপি মুখপাত্র যে কথা বলেছেন, তা তার ব্যক্তিগত মত। টাইমস নাও তার মত সমর্থন করে না। তারা বিতর্কে অংশগ্রহণকারীদের বলেছে, তারা যেন সংযম বজায় রাখেন। ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকেন।
নূপুরের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে মুম্বই পুলিশ।
বিতর্কে নতুন মোড়
এরপরই বিতর্কে নতুন মোড় এসেছে। মুসলিমদের একাংশ দাবি করছে, টিভি-র এইসব বিতর্ক মুসলিমদের বয়কট করা উচিত। মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সাবেক মুখপাত্র এস কিউ আর ইলিয়াস ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ”এই সব টিভি-বিতর্কে যাওয়ারই দরকার নেই।”
তার মত হলো, ”এই ধরনের বিতর্কে মুসলিম নেতা বা প্রতিনিধিরা বলার সুযোগ বেশি পান না। তাদের মতামত জানাতেই দেয়া হয় না। টিভি-চ্যানেলের এজেন্ডা আগে থেকে তৈরি থাকে। তাই নিজের কথা বলতে না পারলে সেখানে গিয়ে লাভ কী?”
একই যুক্তি দিচ্ছেন সাংবাদিক কুরবান আলি। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ”আমি অনেকদিন ধরে বলছি, এই সব বিতর্কে যাওয়া অর্থহীন। তার চেয়ে সামাজিক মাধ্যমে নিজেদের মত জানানো হোক।”
প্রবীণ সাংবাদিক মিলন দত্ত দীর্ঘদিন ধরে ইসলাম ও ভারতে মুসলিমদের নিয়ে গবেষণা করেছেন। ডয়চে ভেলেকে মিলন বলেছেন, ”ভারতে হিন্দুরা মুসলিমদের বিষয়ে, মহানবী(সাঃ) সহ বিভিন্ন বিষয়ে খুব কম জানেন। ফলে তারা নানা শোনা কথায় বিশ্বাস করেন। মুসলিমদের উচিত, তাদের কথাগুলো জানানো, যাতে এই ভুল ধারণাগুলো ভাঙে।”
মিলন মনে করেন, ”আল্লাহ এবং মহানবী(সাঃ) সম্পর্কে কোনো বিরূপ মন্তব্য হলে মুসলিমরা তা মেনে নিতে পারেন না। কিন্তু এখানে সহিংস প্রতিক্রিয়া জানানো উচিত নয়। বরং তাদের নিজেদের যুক্তি দিতে হবে, তারা যাকে সত্য বলে মনে করেন, সেই বিষয়টি বলতে হবে।”
আরেক প্রবীণ সাংবাদিক দীপ্তেন্দ্র রায়চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ”আমি ভয়ংকরভাবে বাক-স্বাধীনতার পক্ষে। তবে বক্তব্যের মধ্যে শালীনতা থাকা দরকার। ঘৃণা-উদ্রেককারী কথা বলা খারাপ।” কিন্তু দীপ্তেন্দ্র মনে করেন, ”বিতর্ক থেকে পালিয়ে গেলে চলবে না। যে কোনো ধরনের সমালোচনার জবাব দিতেই হবে। কেউ কিছু বললে, যুক্তি দিয়ে তার পাল্টা কথাটা বলা জরুরি।”