নিজস্ব প্রতিনিধি :ফতুল্লায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং চক্র। তাদের তৎপরতায় অতিষ্ঠ এলাকার সাধারণ মানুষ। অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হলেও ভয়ে অনেকে প্রতিবাদ করতে সাহস করেন না। কারণ এই কিশোর গ্যাংয়ের অনেক সদস্য প্রভাবশালীদের বখে যাওয়া কিশোর ছেলে। এলাকাবাসীর মতে, ফতুল্লায় অপরাধ জগতের নতুন আতঙ্ক ‘কিশোর গ্যাং’ অনেকটাই সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে।
অপ্রতিরোধ্য তারা, পাড়া-মহল্লায় দল বেঁধে অবাধে চলাফেরা করে। খুন, ধর্ষণ, হাঙ্গামা, দোকানে ফাও খাওয়া, মাদক সেবন, যৌন হয়রানি থেকে শুরু করে এমন কোন অপরাধ নেই যা তারা করে না। বয়স দেখলে বুঝার কোনও উপায় নেই যে, এদের সংঘটিত অপরাধ কী ভয়ঙ্কর হতে পারে। এরা অনেকটা যেকোনো তুচ্ছ ঘটনায় চড়াও হচ্ছে যে কারো ওপর। অনেকের কাছে এরা এখন মূর্তিমান আতঙ্ক। এদের শাসন করতে গিয়ে এলাকার সম্মানিত মানুষও লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন। পুলিশের খাতায় তালিকা না থাকায় কিংবা বয়সে কম হওয়ায় এরা গ্রেফতারের বাইরে থেকে যাচ্ছে। দাপা বেপারীপাড়া, চন্দ্রাবাড়ী, শাহজাহান রোলিং মিলস, ধর্মগঞ্জ, চঁলার মাঠ, রেললাইন বটতলাসহ আশপাশ এলাকায় রয়েছে এদের অবাধ বিচরণ। এদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ বা নির্যাতিত হয়ে মুখ খুললে বা আইনী সাহায্য নিলে ওই ভুক্তভোগিকে আরও বেশি নির্যাতনের শিকার হতে হয়।
এসকল এলাকার ভয়ঙ্কর কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা হলো- শিল্পপতি জুয়ারী তাপুর ভাতিজা সিজান, হাদী সুমনের ছেলে কুখ্যাত মোবাইল ছিনতাইকারী কিশোর গ্যাং লিডার দূর্জয়, সজল ওরফে ইয়াবা, মেহেদী, কামরুল, আবু তাহেরের দুই ছেলে মাদক ব্যবসায়ী তারেক ও আল-আমিন, মাদক ডিলার হেনার ছেলে রনি ওরফে ডিব্বা রনি, মদ ব্যবসায়ী জলিলের ছেলে জয়, হবু মিয়ার ছেলে সূর্য, খোঁজপাড়ার সাহা মিয়ার ছেলে সানী সহ মাদকাসক্ত আরো ১৫/২০ সদস্যের একটি দল। সূত্রে জানা যায়, এসকল মাদকাসক্ত কিশোর গ্যাংয়ের যন্ত্রণায় গার্মেন্টস শ্রমিকরা ঠিক মতন বেতন নিয়ে বাসায় ফিরতে পারে না। ছেলে-মেয়ে এমনকি ভাই-বোনও একসাথে রাস্তা দিয়ে চলতে পারে না। এ কিশোর গ্যাংয়ের দৃষ্টিগোচর হলে মিথ্যে অপবাদ দিয়ে মারধর করে ছিনিয়ে নিয়ে যায় সাথে থাকা অর্থকড়ি, মোবাইল ফোন সহ মূল্যবান সামগ্রী। এলাকায় হাঁটতে পারেনা, নির্জনে নিয়ে খারাপ অপবাদ দিয়ে টাকা দাবী করা হয়। মাদকের টাকা জোগাড় করতে এরা অনেক নিরীহ মানুষের পকেটে মাদক দিয়ে নির্যাতন করে এবং পরবর্তীতে গ্রামের আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে বিকাশ যোগে টাকা নিয়ে আসে। অভিযোগ রয়েছে, তাদের অপকর্ম চলমান থাকলেও স্থানীয় প্রশাসন উদাসীন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতাদের প্রশ্রয়ে মূলত নিম্নবিত্ত পরিবারের বখে যাওয়া সন্তানদের নিয়ে গড়ে উঠেছে এ সব গ্যাং। রয়েছে প্রভাবশালীদের বখে যাওয়া কিশোর সন্তান। তারা আরও অভিযোগ করেন, একটি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রাথমিকভাবে বড় অপকর্ম করার সাহস থাকে না। কিন্তু প্রভাবশালী নেতারা যখন তাদের কাজকর্ম করার জন্য প্রশ্রয় দিয়ে থাকে তখন সে সব গ্যাংয়ের সদস্যরা ধীরে ধীরে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। আর এ ভাবে গ্যাংগুলো মারাত্মক অপকর্ম করে থাকে। তবে সচেতন মহল মনে করেন, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের এখনই নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে ভবিষ্যতে তাদের মাধ্যমে আরো বড় ধরনের অপরাধমূলক ঘটনা সংঘটিত হতে পারে।
এ অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কিশোর গ্যাংগুলোকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়া থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেছেন। এ ব্যাপারে ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ রিজাউল হক দিপু বলেন, ‘কিশোর গ্যাং’ বলতে কিছু নেই, তবে ‘কিশোর অপরাধী’ আছে। আর কিশোর অপরাধীদের প্রতিরোধ করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যারাই এসব অপরাধমূলক কার্যকলাপ করে তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।