নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট খসড়া কমিটি কেন্দ্রে প্রেরণ করেছে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। চলতি বছরের মার্চে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে এই খসড়া কমিটি প্রেরণ করা হয়। তবে কবে নাগাদ সেই খসড়া কমিটি পূর্ণাঙ্গভাবে দায়িত্ব পাবে তা জানাতে পারেননি কেউ। তবে সম্ভাবনা রয়েছে আগামী কোরবানি ঈদের পূর্বেই নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ পূর্ণাঙ্গ কমিটি পেতে পারে।
গত বছরের ২৩ অক্টোবর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে আবদুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক পদে আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদলকে পুনরায় নির্বাচিত করা হয়। সেই সাথে দ্রুত সময়ের মধ্যে খসড়া কমিটি প্রেরণ করতে বলা হয় তাদেরকে। একই সাথে স্বজনপ্রীতি ও মাইম্যান যেন না দেয়া হয় সেই বিষয়ে সতর্ক করা হয় কঠোরভাবে। যদিও সম্মেলনের প্রায় ছয় মাসেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি আনতে না পারায় সমালোচনা তৈরি হয় হাই ও বাদলকে নিয়ে। তবে জেলা আওয়ামী লীগের সূত্র জানায়, চলতি বছরের মার্চ মাসেই খসড়া কমিটি প্রেরণ করা হয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাদল বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, রোজার পূর্বেই খসড়া কমিটি কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। স্পেসিফিক তারিখটা হাই সাহেব বলতে পারবেন। আমরা ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট খসড়া কমিটি জমা দিয়েছি। এবার নতুন ও পুরাতন মিলিয়েই কমিটি পাঠানো হয়েছে। নতুন নেতৃত্ব দিতে পারবেন এমন ব্যক্তিদের সুযোগ দেয়া হয়েছে। বাকিটা কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নিবে কাকে রাখবেন আর কাকে বাদ দিবেন। আমরা সর্বোচ্চ যাচাই বাছাই করে কমিটি কেন্দ্রে জমা দিয়েছি।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই বলেন, ‘আমরা একসাথেই কমিটি জমা দিয়েছি। কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক দেশের বাইরে আছেন। উনি ফিরলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিটি এসে যাবে। এবারের কমিটিতে কিছু নতুন মুখ আছে, আবার অনেকে বাদও পড়তে পারেন। নতুন পুরাতন মিলিয়েই কমিটি। সব পুরোনো লোককে তো রাখা যায় না, তাহলে তো নতুন কমিটিই হতো না। সবদিক বিবেচনা করেই খসড়া কমিটি করেছি আমরা।’
জেলা আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, সম্মেলন চলাকালে আওয়ামী লীগের সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন হাই ও বাদলকে। অতীতের ভুলের জন্য প্রকাশ্যে সমালোচনা করতেও ভুলেননি। এছাড়া আসন্ন কমিটির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার কথাও জানানো হয় সকলের সামনে। এর ফলে বিতর্কিত, একপাক্ষিক কিংবা বাণিজ্য করে কমিটি দিতে চাইলে খুব একটা সুবিধা পাবেন না সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। ফলে খসড়া কমিটি যেমনই দেয়া হোক না কেন, কেন্দ্র জেনে বুঝেই কমিটি এপ্রুভ করবেন। এক্ষেত্রে সুবিধা নিতে চাইলেও লাভ হবে না।
সেসময় ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘নতুন নেতাদের তো আসতে দেন না। মশারির ভেতরে মশারি টানান। বসন্তের কোকিল আছে, দুঃসময়ের কর্মীরা নেই। এই আওয়ামী লীগের দরকার নেই। কে কি করেন সব শেখ হাসিনার কাছে রিপোর্ট আছে। পদ বাণিজ্যের কথা যেন না শুনি। পকেটের লোক আমাদের চলবে না। নেত্রী কমিটি দেখবেন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে। উনি দেখে আমাকে নির্দেশ দিবেন, তারপর আমি এপ্রুভ করবো। এবার তদন্ত করে কমিটি দেব। পয়সা খেয়ে যারা কমিটি করে, এই ধরনের নেতা আমাদের প্রয়োজন নেই। মাথা নাড়ছেন অনেকেই, কে কি করেন সব জানি। ভালো হয়ে যান, আর করবেন না। নিজেদের সংশোধন করুন। ত্যাগী কর্মীদের সাথে প্রতারণা করবেন না।’
বিগত কমিটিতে বেশ কয়েকটি পদ ফাঁকা রেখে মেয়াদ শেষ হয়েছিল। হাই ও বাদলের বিরোধ এবং বলয়ের রাজনীতির প্রভাবে শূন্য পদ পূরণ করা সম্ভব হয়নি দলটির পক্ষে। এছাড়া বিতর্কিত জিকে শামীমকে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়েও বিতর্কের জালে জড়িয়েছেন এই দুই নেতা। ফলে সবদিক থেকেই বেশ চাপের মুখেই আছেন তাঁরা। নতুন কমিটির দায়িত্ব প্রাপ্তির আগে সবার সামনে কেন্দ্রীয় নেতার ভর্ৎসনার পর নতুন করে বিতর্কে যেতে চাইবেন না এমনটাই ধারণা অনেকের।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারের কমিটিতে নতুন মুখের পাশাপাশি শামীম ওসমানপন্থী আওয়ামী লীগ নেতাদের আধিপত্য থাকার সম্ভাবনা প্রবল। বিগত কমিটিতে হাই ও বাদলের সাথে দায়িত্বে ছিলেন মেয়র আইভী। এবার তিনি সেই দায়িত্ব পাননি। ফলে আইভী বলয়ের নেতা তুলনামূলক কম থাকবে এমনটাই ধারণা অনেকের। তবে এসব প্রশ্নের উত্তরের জন্য অপেক্ষা করতে হবে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত আসা পর্যন্ত। যতদিন কমিটি না আসছে, ততদিন এই সংক্রান্ত রহস্য থেকেই যাবে।