আদালত প্রতিবেদক: নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ভোট গ্রহণ আগামী বছরের জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরি মাঝে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি প্যানেল থেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে কে কে হতে যাচ্ছেন প্রার্থী সেই বিষয়ে আইনজীবীদের মাঝে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। সম্ভাব্য প্রার্থীরাও ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় বাড়িয়ে দিয়েছেন।
নির্বাচনের বিষয়ে আইনজীবীদের সূত্রে, আওয়ামী লীগের সংগঠন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ প্যানেল থেকে সভাপতি পদে আইনজীবী সমিতির দুইবারের নির্বাচিত সাবেক সভাপতি ডায়নামিক আইনজীবী লিডার খ্যাত অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েলের নাম একপ্রকার চূড়ান্ত বলা চলে। কারণ আইনজীবী সমিতির নেতৃত্বাস্থানীয় আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে নেতাকর্মী, সমর্থক ও ভোটারদের মধ্যেও এমন একটি আলোচনা রয়েছে এবং তারা মনে করছেন আওয়ামী লীগ প্যানেল থেকে সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েল অপ্রতিরোধ্য সভাপতি প্রার্থী। তার প্রার্থীতা মানেই তার জনপ্রিয়তায় ভোটের মাধ্যমেই জয় নিশ্চিত। তাকে ভোটের নির্বাচনে পরাজিত করার মত কোনো প্রার্থী বিএনপিতে এখন আর কেউ নেই।
এসব কারনে বর্তমান পরিস্থিতিতে সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েলের নামটি সবার মুখে মুখে। ফলে সভাপতি পদ নিয়ে আওয়ামী লীগ প্যানেল থেকে নতুন করে কাউকে নিয়ে ভাবছেন না আওয়ামীলীগের আইনজীবী নেতারা। এমনকি বিএনপির প্যানেল থেকে যারা নির্বাচন করতে ইচ্ছুক সেইসব সম্ভাব্য প্রার্থীরাও হাসান ফেরদৌস জুয়েলকে আওয়ামী লীগ প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত ধরেই আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করছেন।
সভাপতি প্রার্থী যখন প্রায় নিশ্চিত তখন আলোচনায় কে হতে যাচ্ছেন সেক্রেটারি প্রার্থী। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থীতা নিয়ে কোর্টচত্বরে আলোচনা এখন তুঙ্গে। যে আলোচনায় উঠে এসেছে ৩জন আইনজীবী নেতার নাম সবার উপরে। যাদের মধ্যে একজন প্রবীণ এবং দুইজন নবীন আইনজীবী নেতা। আইনজীবীরা বলছেন, আওয়ামী লীগ প্যানেল থেকে সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় রয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের সদস্য সচিব সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদ উর রউফ, আইনজীবী সমিতির বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রবিউল আমিন রনি ও আইনজীবী সমিতির সাবেক কোষাধ্যক্ষ অ্যাডভোকেট আব্দুর রউফ মোল্লা।
এই তিনজনের মধ্যে সাধারণ সম্পাদক পদে আইনজীবীরা সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রাখছেন অ্যাডভোকেট রবিউল আমিন রনিকে। এর কারণ হিসেবে আইনজীবীরা বলছেন, আদালতপাড়ায় একজন নম্র-ভদ্র আইনজীবী হিসেবে পরিচিত রবিউল আমিন রনি। আদালতপাড়ায় তার ক্লিন ইমেজ রয়েছে। একই সঙ্গে হাসান ফেরদৌস জুয়েলের সঙ্গে জুটি হিসেবে মানানসই এবং যোগ্য প্রার্থী হিসেবে মনে করা হচ্ছে রনিকেই। রবিউল আমিন রনি আইনজীবীদের কল্যাণে আইনজীবী সমিতির উন্নয়নে জুয়েলের সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করতে পারবেন বলে মনে করছেন আইনজীবীরা।
এ ছাড়াও উপরোক্ত তিনজনের মধ্যে রনিকেই এগিয়ে রাখছেন সাধারণ আইনজীবীরা। আদালতপাড়ার বাইরের রাজনীতিতে নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবার ওসমান পরিবারের বিশ্বস্ত কর্মী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন তিনি। সোনারগাঁও উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের রাজনীতির মাধ্যমে রাজনীতি শুরু তার। পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জ আইন কলেজে লেখাপড়া করার সময় তিনি নারায়ণগঞ্জ আইন কলেজ ছাত্র ছাত্রী সংসদের জিএস ছিলেন। নারায়ণগঞ্জ বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইন ছাত্র পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। আইন কলেজে এখন তিনি শিক্ষকতাও করছেন। তার বহু ছাত্র এখন আইনজীবী হয়েছেন। নির্বাচনে সেই বিষয়টিও রনির জন্য পজেটিভ। আওয়ামী পরিবারের এই সন্তান আদালতপাড়ায় সকল আইনজীবীদের মাঝে ক্লিন ইমেজধারী একজন আইনজীবী হিসেবে পরিচিত। সভাপতি পদে প্রার্থী অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েলের সঙ্গে সেক্রেটারি পদে অ্যাডভোকেট রবিউল আমিন রনির জুটি হবে একটি শক্তিশালী প্যানেল, যারা নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় ওসমান পরিবারের ঝান্ডা শক্ত হাতে তুলে ধরবেন।
অন্যদিকে অ্যাডভোকেট মাসুদ উর রউফ একজন সিনিয়র প্রবীণ আইনজীবী হিসেবে জুয়েলের সঙ্গে সেক্রেটারি পদে দাঁড়ানোটা যুতসই মনে করছেন না সাধারণ আইনজীবীরা। আদালতপাড়ায় এখন তরুণ নেতৃত্বের প্রতি আইনজীবীরা আগ্রহী। মাসুদ উর রউফ আইনজীবী সমিতির নেতৃত্ব সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন দীর্ঘকাল যাবত। যে কারণে সাধারণ আইনজীবীরা মনে করছেন, মাসুদ উর রউফ নেতৃত্ব তৈরিতে দায়িত্বশীল হিসেবে পারফেক্ট, তাকে সমিতির নেতৃত্বের প্রয়োজন নেই, তিনি এমনিতেই সকলের কাছে সম্মানিত ব্যক্তি।
সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছেন উদীয়মান হিসেবে আইনজীবী সমিতির সাবেক কোষাধ্যক্ষ অ্যাডভোকেট আব্দুর রউফ মোল্লা। আইনজীবীরা বলছেন, তার আরও দীর্ঘ সময় রয়েছে। তাকে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করা হতে পারে। তবে তিনি আদালতপাড়ায় শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারেননি এখনো। সাধারণ আইনজীবী থেকে শুরু করে আইনজীবী নেতাদের সঙ্গে সেরকম ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করতে পারেননি তিনি। এই তিনজনের বাইরে আরও দু’একজনের নাম কেউ কেউ বললেও তারা নির্বাচনের বিষয়ে তেমন কোনো আগ্রহ দেখায়নি। তাদের নিয়েও আইনজীবীদের আগ্রহ নেই।
এখানে উল্লেখ্য যে, নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে টানা দুইবার দায়িত্ব পালন করেছেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মোহসীন মিয়া অ্যাডভোকেট মোঃ মাহাবুবুর রহমান। আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী টানা দুই মেয়াদে সভাপতি সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালনের কোন সুযোগ নেই। যে কারণে বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মোহসীন মিয়া তৃতীয় মেয়াদে একটানা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। তবে সাধারণ সম্পাদক পদে মাহাবুবুর রহমান সভাপতি পদে নির্বাচনের কোনো আভাস পাওয়া যাচ্ছেনা। আইনজীবীদের মাঝে আলোচনাতেও নেই তেমন একটা। তেমন কোনো আগ্রহ বা কিংবা ঘোষণা তিনি দেননি।