নিজস্ব সংবাদদাতা: নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব এ. কে. এম. শামীম ওসমান বলেছেন- এই নারায়ণগঞ্জে মার্চ মাসে শুধু বঙ্গবন্ধু’র কথা হবে। এই নারায়ণগঞ্জে মার্চ মাস মানেই স্বাধীণতার পক্ষে কথা বলা। আমি দেখতে পাচ্ছি গত কিছুদিন যাবৎ এই নারায়ণগঞ্জে যারা ওয়ান ইলেভেনের প্রবক্তা, যারা বাংলাদেশে একটি নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করার চেষ্টা করেছেন, বাংলাদেশের সেনাবাহিনী, র ্যার ও পুলিশদের উপর যদি কোনো আঘাত আসে সেসময় যারা খুশী হয়ে হাততালি দেন সেই সমস্ত লোকেরা নারায়ণগঞ্জে এসে আজকে মিটিং করছেন। তাতে আমার কোনো আপত্তি নাই, আপত্তি হচ্ছে ঐখানে যেকোন মুখোশধারীরা তাদের নারায়ণগঞ্জে নিয়ে আসছেন।
বন্দর থানা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত কর্মীসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শনিবার (১২ মার্চ) বিকেলে বন্দর থানার খানবাড়ি এলাকায় বন্দর থানা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এ কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়।
শামীম ওসমান বলেন- তারা নারায়ণগঞ্জে দাড়িয়ে সরকার, রাষ্ট্র এবং নেত্রীর বিরুদ্ধে বিষোধাগার করছে। আমাদের কাছে রেকর্ড আছে, তারা বক্তব্য দিচ্ছেন দেশে নাকি আরেকটি ১৫ই আগষ্ট হবে। আমি অবাক এবং বিস্মিত হই। আমি দেখছি তারা বলছেন, তারা আমাদের নেত্রীকে তুলনা করছেন আইয়ুব খানের সাথে। এরকম কথা তারা বলছেন। তারা বলছেন এটা নাকি একটা ব্যর্থ রাষ্ট্র। তাতে আমার কোনো আপত্তি নাই, ওরা কি বললো না বললো তাতে কিছু যায় আসে না। কিন্তু যখন দেখি একই মঞ্চে হয়তো বা আমার মতো কেউ একজন দাড়িয়ে বক্তব্য শুনছেন এবং বক্তব্য দিচ্ছেন। তারা কারা, এরা খুবই বিপদজনক।
তিনি বলেন- জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের কারাগারে হত্যা করার সাহস দেখায় নাই। কিন্তু খন্দকার মোশতাক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করিয়েছে। নারায়ণগঞ্জে খন্দকার মোশতাকের বংশধরেরা খুব দ্রুতগতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। একটি কারণে, একটি প্লাটফর্ম তৈরি করতে চাচ্ছে। সেই প্লাটফর্মটা কি? ঢাকার খুব সন্নিকটে নারায়ণগঞ্জ এটাই নারায়ণগঞ্জের বড় সমস্যা।
তিনি আরও বলেন- বঙ্গবন্ধু বলেছেন, বাংলাদেশের যেকোন আন্দোলনে, যেকোন অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নারায়ণগঞ্জ সবসময় ভুমিকা রেখেছে। সেটা ৫২’ হোক, ৬২’ হোক, ৬৬’ হোক, ৬৮’ হোক বা ৬৯’ই হোক না কেন। সেই নারায়ণগঞ্জটাকে যাতে ঠিক সময়মতো তথা যখন বঙ্গবন্ধু কণ্যা শেখ হাসিনার দরকার পড়বে, ঠিক তার আগেই নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও স্বাধীণতার পক্ষের নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সাংসদ বলেন, আমার বিরুদ্ধেও অনেক কথা বলা হচ্ছে, আমি এগুলি দেখি না, শুনিও না। আসার সময় একজন সাংবাদিক বললো, কোনো এক রাজাকারের ছেলে নাটক করতাছে বাড়ির সামনে পটকা ফুটাইয়া। এই সমস্ত লোকেরা আমার বিরুদ্ধে নাকি যা তা বলছে। আমাকে জিজ্ঞাসা করলো, আপনি কিছু বলবেন না। আমি বললাম আমি কিছু শুনিই নাই, বলবো কি? বললো ঐ বলেছে। আমি বললাম, রাস্তা দিয়ে হাটার সময় যদি মহল্লার কিছু নেড়ী কুত্তা থাকে, ঐ নেড়ী কুত্তা যদি ঘেউ ঘেউ করে আমি তো কুকুর না, আমি তো মানুষ। আমি কি তাকে কামড় দিতে পারি?
তিনি বলেন- যা বলতে এসেছিলাম তা বলতে পারবো না। তবে একটা কথা বলতে পারি ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে, গভীর ষড়যন্ত্র। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়েছে, এই যুদ্ধের প্রভাব আমাদের এখানেও পড়বে। কিছু সংখ্যক রাজনৈতিক শক্তি সেই সুুযোগটা নেয়ার চেষ্টা করবে। আমাদের করণীয় কি? আমরা কি একটা কথাই বলবো যে, আপা আছেন, নেত্রী আছেন, শেখ হাসিনা তো আছেনই, প্রধানমন্ত্রী আছেন, একথা বলতে আমার ঘৃণ্যা লাগে। কেন উনি দেখবেন সব? উনি সব দেখবেন আর আমরা কিছু করবো না, আঙ্গুল চুষবো তা তো হতে পারে না। উনি উনার বাবা-মা, ভাই-বোন সবকিছু হারিয়ে উনাকেই দেখতে হবে সব। আর আমরা কি করবো, আমরা চুপচাপ বসে থাকবো তা তো হতে পারে না।
তিনি আরও বলেন- এখানে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সহ অঙ্গ-সহযোগী সংঠনের অনেকেই আছেন, চেয়ারম্যান-কাউন্সিলররা আছেন। অনেকেই কাউন্সিলর পাশ করার পরও পাশ করেন নাই তারাও আছেন। অনেক কিছুই আমি জানি, কারণ দল করি তো সরাসরী বলা যায় না। যেটুকু পারলাম সেটুকু বললাম। তবে একটা কথা বলতে চাই, এই সুযোগে কেউ যদি মনে করেন যে, আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মী যারা আছেন তাদের গায়ে ফুলের টোকা দিবেন। এই আশা ভুলে যান, ফুলের টোকা দিলে এতো জোরে আঘাত করা হবে যার জবাব দেয়ার ক্ষমতা আপনাদের নাই।
ধৈর্য্য ধরে আছি উল্লেখ করে শামীম ওসমান বলেন- দেখছি, ধৈর্য্য ধরছি, আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের পছন্দ করেন। কিন্তু অনেকেই মনে করছেন, অনেক কিছু পেয়ে গেছেন, অনেক কিছু হয়ে গেছেন। অনেক কিছু পানও নাই, অনেক কিছু হনও নাই। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের নামে চার্জশীট দেয়া হয় ডিজিটাল অ্যাক্টে, মামলা করেন আওয়ামী লীগের আরেকজন। আমরা দেখছি, অপেক্ষা করছি, দেখতে চাচ্ছি।
তিনি বলেন- শক্তি আমাদের উপরে সৃষ্টিকর্তা, উছিলা শেখ হাসিনা। আর রাজনীতি করে জনগনকে সাথে নিয়ে, জবাব জনগনকে নিয়েই সামনে হয়তো দিবো ইনশাআল্লাহ। তার আগে যারা এগুলো করছেন, এখনো সময় আছে সঠিক পথে আসেন। আমরা সাচ্চা যারা দেশপ্রেমিক, সাচ্চা যারা স্বাধীণতার পক্ষে, সাচ্চা যারা আওয়ামী লীগ করেন আমরা চাই একটা প্লাটফর্মে এসে কাজ করেন। আঘাত করলে কিন্তু হয়তো প্রথম আঘাত আমাকে করবে, দ্বিতীয় আঘাত কিন্তু যারা আপনারা আছেন আপনাদেরই করবে, কাউকে ছাড় দিবে না ওরা।
তিনি আরও বলেন- শুধু একটা কথাই বলতে চাই, যারা আমার সাথে থাকবেন তারা পদ-পদবী পাবেন কিনা জানিনা। তবে এতটুকু বলতে পারি, তারা জনগনের ভালোবাসা ও সম্মান অবশ্যই পাবেন। কারণ যারা জনগনের পাশে থাকে, অন্যায়-অত্যচার-অবিচারের বিরুদ্ধে থাকে, যারা মাদক-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে থাকে মানুষ তাদের কথা অবশ্যই ভাববে এইটুকু আমি বিশ্বাস করি।
বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. এ. রশিদ’র সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন- নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জি. এম. আরমান, হুমায়ন কবির মৃধা, বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজিম উদ্দিন, আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর হোসেন, জসিম উদ্দিন, মদনপুর ইউপি চেয়ারম্যান এম. এ. সালাম, ধামগড় ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন, কলাগাছিয়া ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার প্রধান, জেলা যুবলীগ নেতা এহমানুল হক নিপু, ২৪নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান লিটন, যুবলীগ নেতা খান মাসুদ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাফায়েত আলম সানী, বর্তমান সভাপতি আজিজুল, সাধারণ সম্পাদক আশ্রাফুল ইসলাম রাফেল, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ, সাধারণ সম্পাদক হাসনাত বিন্দু, বন্দর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল হাসান আরিফ, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি জুয়েল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর দুলাল প্রধান, মহানগর মহিলা লীগের সভাপতি ইসরাত জাহান স্মৃতি, সালিমা হোসেন শান্তা প্রমূখ।
Like this:
Like Loading...