প্রিন্ট নারায়ণগঞ্জঃ অপরাধ আর অশ্লীলতার জন্য বারবারই বিতর্কিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে উঠে এসেছে টিকটকের নাম। নারী পাচার থেকে শুরু করে মারামারি, ধর্ষণ, দেহ ব্যবসার মত জঘন্য অপরাধ ঘটেছে এই এপসের সূত্র ধরে। তারই ধারাবাহিকতায় এবার টিকটক শুটিং করার নাম করে এক তরুণীকে গণধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে ৩ আসামীর বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে এদের একজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করেছে পুলিশ। গত ২৫ জুলাই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে এইচআর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভেতর এই গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী ওই তরুণী টঙ্গী আবদুল্লাহ পুর এলাকার বাসিন্দা। ঘটনার পর থানায় ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে এক আসামীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। নারায়ণগঞ্জে টিকটকের মাধ্যমে সংগঠিত অপরাধ নতুন কিছু নয়। এর আগেও আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্র হৃদয় গ্রুপের টিকটক হ্যাংআউট পার্টি অনুষ্ঠিত হয়েছে নারায়ণগঞ্জের এডভেঞ্জার ল্যান্ড পার্কে। পার্টি আয়োজিত হয়েছে মদনপুরের সাইরা গার্ডেনেও। হৃদয় গ্রুপের সাথে নারী পাচারকাজে জড়িত থাকার অপরাধে গত ৫ জুন র্যাব ১১ দুইজনকে গ্রেপ্তার করে। তারা হচ্ছেন সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদী এলাকার বাসিন্দা রুবেল সরকার রাহুল (৩২) ও তার স্ত্রী সোনিয়া (২৫)। একই মাসের ৭ জুন টিকটকের ফাঁদে আটকে অপহৃত হওয়া এক কিশোরী (১৫)কে সিদ্ধিরগঞ্জ উদ্ধার করে বরগুনা পুলিশ। এসময় আটক করা হয় রুবেল নামে এক রাজমিস্ত্রীকে। সবশেষ টিকটকের জালে আটকেছেন টঙ্গীর এক তরুণী। গণধর্ষণের শিকার হয়ে মামলা দায়ের করেছেন রূপগঞ্জ থানায়। মামলার বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, টিকটকে অভিনয় করার জন্য ওই তরুণীর (১৮) সাথে চুক্তি করে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া এলাকার সালাম নামে এক ব্যক্তি। দিনক্ষণ অনুযায়ী রোববার তার আসার কথা ছিলো। এদিন সালামের দেয়া একটি নাম্বারে যোগাযোগ করে ওই তরুণী রূপগঞ্জ উপজেলার ব্রাক্ষ্মনখালী এলাকায় আসে। সেখানে তাকে এইচআর মডেল স্কুলের ভেতর আসতে বলা হয় তাকে। এই স্কুলটি মূলত রূপগঞ্জ উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হারেজের মালিকানাধীন। রাত ৮টার দিকে তরুণী স্কুলে এসে পৌঁছালে তাকে রিসিভ করে এইচআর মডেল স্কুলের কেয়ারটেকার জামাল হোসেন। জামাল তাকে হারেজের ব্যক্তিগত কক্ষে বিশ্রামের জন্য বসতে দেয়। সেখানে আগে থেকেই বসে ছিলো হারেজের ড্রাইভার আবু হানিফ এবং হারেজের ভাতিজা আবু সাইদের ছেলে আয়নাল হক। তরুণী স্কুলে উপস্থিত হয়ে বুঝতে পারে এখানে কোন শুটিং হবে না। বিপদ আঁচ করতে পেরে বেরিয়ে যেতে চাইলে তার মুখ বেঁধে রুমের ভেতর তালাবদ্ধ করে রাখে আসামীরা। রাত ১০ টার পর থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত আসামীর গণধর্ষণ করে তাকে। পরে ভোরের দিকে তাকে ছেঁড়ে দিকে ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে সহায়তা চায় তরুণী। খবর পেয়ে ভোলাবো ফাঁড়ি পুলিশ ও রূপগঞ্জ থানা পুলিশ সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে এবং কেয়ারটেকার জামাল হোসেনকে আটক করে নিয়ে আসে। ঘটনার পরদিন ২৬ জুলাই বিকেলে ভুক্তভোগী তরুণী বাদী হয়ে ৩ আসামীর বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ থানায় গণধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। মামলায় জামালকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক (তদন্ত) হুমায়ুন কবীর বলেন, ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরপরেই গুরুত্বের সাথে মামলাটি গ্রহন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১ আসামীকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছি আমরা। বাকি ২ আসামী পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যহত রয়েছে।