মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪০ অপরাহ্ন

র‌্যাব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন ও গর্ভপাতের অভিযোগে স্ত্রীর মামলা

সংবাদ দাতার নাম
  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ৫ জুন, ২০২০
  • ২০৪ বার পড়া হয়েছে
যৌতুক দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় স্ত্রীকে দফায় দফায় শারীরিক নির্যাতন ও জোর করে গর্ভপাত ঘটানোর অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে র‌্যাব কর্মকর্তা নাজমুস সাকিবের বিরুদ্ধে। তিনি র‌্যাব সদর দফতরের কমিউনিকেশন অ্যান্ড এসআইএস উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত। মামলাটি দায়ের করেছেন নাজমুস সাকিবের স্ত্রী ইসরাত রহমান। মামলায় সাকিবের বাবা সফিউল্লাহ তালুকদার ও মা খালেদা সুলতানাকেও আসামি করা হয়েছে।

ইসরাত রহমান প্রথমে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা থানায় ইমেইলের মাধ্যমে অভিযোগটি পাঠান। তবে ই-মেইলে দায়ের করা অভিযোগ এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে আইনগত সীমাবদ্ধতা থাকায় থানা কর্তৃপক্ষ ভুক্তভোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরে তিনি থানায় এসে মামলাটি দায়ের করেন।

রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম জানান, ইমেইলের মাধ্যমে নারী নির্যাতনের অভিযোগ এনে নাজমুস সাকিবের স্ত্রীর পাঠানো অভিযোগটি পেয়েছেন। তবে ইমেইলে পাঠানো অভিযোগ মামলা হিসেবে গ্রহণের প্রক্রিয়া এখনও চালু না হওয়ায় তাকে থানায় এসে অভিযোগ দাখিল করার অনুরোধ করা হয়। পরে রাতে বাদী সশরীরে এসে এজাহার দাখিল করেছেন। তিনি বলেন, রাত ৯টার দিকে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৪ মে) দুপুরে ইসরাত রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, আমি আজকেই ইমেইলের মাধ্যমে অভিযোগ পাঠিয়েছি। শারীরিক অসুস্থতার কারণে সশরীরে এজাহার দিতে পারিনি, ইমেইলে পাঠিয়েছি। পুলিশের ঊর্ধ্বতনদের এ বিষয়ে জানানো হয়েছে।

যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ বিষয়ে কোনও কথা বলতে চাননি র‌্যাব কর্মকর্তা এএসপি নাজমুস সাকিব।
তবে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার-বিন-কাশেম জানিয়েছেন, তারা অভিযোগের বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। অভিযোগগুলো তদন্ত করা হবে বলে জানান তিনি।

অভিযোগে যা বলেছেন নাজমুস সাকিবের স্ত্রী

ইমেইলে পাঠানো অভিযোগে নাজমুস সাকিব ও তার বামা-মায়ের বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে দফায় দফায় মারধর ও গর্ভপাত করানোর দাবি করেছেন ইশরাত রহমান। তিনি লিখেছেন, ২০১৭ সালের মার্চ মাসে বিয়ের পর থেকে যৌতুকের দাবি করে আসছিল এএসপি নাজমুস সাকিব ও তার বাবা মা। দাবি মতো যৌতুক দিতে না পারায় ইসরাতের ওপর বারবার নেমে আসতো নির্যাতন। মারধরে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাও নিতে হয়েছিল বলে অভিযোগে দাবি করেছেন তিনি।

অভিযোগে তিনি বলেন, ‘বিয়ের পর থেকে আসামিদের যৌতুকলোভী এবং অত্যাচারী মনোভাব প্রকাশ পেতে থাকে। আসামিরা বিভিন্ন সময় আমাকে আমার বাবার কাছ থেকে নগদ টাকা এনে দিতে চাপ দিতে থাকে। কখনও ২০ হাজার টাকা, কখনও ৪০ হাজার টাকা আবার কখনও ৫০ হাজার টাকা। টাকা না দিলে সকল আসামি মিলে আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতো। নির্যাতনের ভয়ে আমি বাবার কাছ থেকে প্রায়ই নগদ টাকা এনে আসামিদের দিতাম। এছাড়া আসামিদের চাহিদা অনুযায়ী তাদের বাসার সকল আসবাবপত্র ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক সামগ্রী আমার বাবা দিতে বাধ্য হন। কিন্তু, তাদের লোভ থেমে থাকেনি। আসামিরা তাদের বাড়ি দোতলা করার জন্য আমার বাবার কাছে ১২ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। আমার বাবা এত টাকা দিতে না পারায় আসামিরা আমার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালাতে থাকে। ইতোমধ্যে আমি গর্ভবতী হলে আমার ওপর আসামিদের নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। আসামিরা আমাকে তালাকের ভয় দেখিয়ে বলে ১নং আসামির (নাজমুস সাকিব) অনেক বড় চাকরি। অন্য জায়গায় বিয়ে করালে ফ্ল্যাট ও গাড়ি পাওয়া যেত। আসামিরা এসব কথা সবসময় বলাবলি করতো। এরপর তারা আমাকে তালাকের ভয় দেখিয়ে আমার গর্ভের সন্তান নষ্টের উদ্দেশ্যে গর্ভপাত করানোর জন্য চাপ দিতে থাকে। আমি অস্বীকৃতি জানালে আমার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়।’

এরপর তাকে কৌশলে নিয়ে গিয়ে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে মগবাজারের রাশমনো হাসপাতালে গর্ভপাত করা হয় বলে অভিযোগ এনেছেন তিনি। ২০১৯ সালের জুলাই মাসের এ ঘটনায় তিনি দীর্ঘদিন শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন।

অভিযোগে তিনি লিখেছেন, কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর আবার যৌতুকের দাবিতে তাকে বাবার বাড়িতে পাঠানো হয়। তার দাবি, সেখান থেকে যৌতুক না নিয়ে ফিরে আসায় ২০১৯ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে নাজমুস সাকিব ও তার বাবা-মা ফের তাকে (ইসরাত) বেধড়ক মারধর করেন। একপর্যায়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে গরম কিছু দিয়ে চেপে ধরে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ইসরাতের দাবি, আহত অবস্থায় বাসা থেকে পালিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে গিয়ে চিকিৎসা নেন তিনি। এ অবস্থায় বিষয়টি প্রকাশ যাতে না পায় সেজন্য ইশরাতের বাবা-মায়ের সঙ্গে মধ্যস্থতা করে তাকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যান সাকিব।

ইশরাত অভিযোগ করেছেন, চাকরির কারণে সাকিবের রংপুরে পোস্টিং হয়। সেখানেও দফায় দফায় নির্যাতন চালায় সাকিব। এরপর ঢাকায় ফিরে দ্বিতীয়বার গর্ভধারণ করলে সেই অনাগত সন্তান নষ্টের জন্য ইশরাতকে চাপ দিতে থাকেন সাকিব। তিনি রাজি না হওয়ায় সন্তানের লালন-পালনের জন্য বাবার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা এনে দিতে বলেন নাজমুস সাকিব। টাকা আনতে অস্বীকৃতি জানানোয় তলপেটে নাথি মেরে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার চেষ্টা করে। সন্তান মেয়ে হবে জেনে আরও ক্ষিপ্ত হয় সে।

ইশরাতের অভিযোগ, ২০২০ সালের ১ মে পুলিশ অফিসার্স মেসে নাজমুস সাকিব ক্ষিপ্ত হয়ে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য তার তলপেট লক্ষ্য করে লাথি মারে। তবে লাথি লাগে কোমরে। তিনি দৌড়ে টয়লেটে ঢুকে আশ্রয় নেন। অনেকক্ষণ টয়লেটে আবদ্ধ থাকার পর কোনোমতে বের হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে চিকিৎসা নেন। এরপর গর্ভের সন্তানের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বাবার বাসায় চলে যান। সেই থেকে তিনি বাবার বাসায় আছেন।

এরপর থেকে র‌্যাবে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তা নাজমুস সাকিব বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছে বলে দাবি করেছেন ইসরাত রহমান। নিজেদের ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। নাজমুস সাকিবের কারণে তিনি ও তার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে অভিযোগে জানিয়েছেন ইসরাত রহমান।

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আজকের নামাজের সময়সুচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৫:০৫ পূর্বাহ্ণ
  • ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ
  • ১৫:৩৫ অপরাহ্ণ
  • ১৭:১৪ অপরাহ্ণ
  • ১৮:৩১ অপরাহ্ণ
  • ৬:২০ পূর্বাহ্ণ
©2020PrintNarayanganj  All rights reserved
Design by: POPULAR HOST BD
themesba-lates1749691102
%d bloggers like this: