প্রিন্ট নারায়ণগঞ্জঃ নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেছেন, গুন্ডা সন্ত্রাস ও মস্তানের ভয় দেখিয়ে নয় ভালোবেসে নৌকায় ভোট দেয় বাংলার জনগণ। আমার কোন সন্ত্রাসী বাহিনী নেই আর রাজনীতি ভন্ডামী জিনিস নয়। জনপ্রতিনিধি হতে হলে মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করতে হবে। হুমকি ধমকি ভয় দেখিয়ে কোন কিছু আদায় করা সম্ভব হয় না। আমার নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিদের্শে জেলা পরিষদের মাধ্যমে জেলার প্রতিটি স্থানে উন্নয়ন করেছি, করে যাচ্ছি। ২০১৬ সালে আমি সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার স্বপ্ন দেখেছিলাম। দলও আমার পেছনে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা মনে করেছিল আমার চেয়ে ভাল যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন এবং আমাদের ডেকে বলেছিলেন আমরা যাকে নৌকা দিয়েছি তার পেছনে ঐক্যবদ্ধ হও তোমাদের ব্যাপারটা আমরা পরে দেখবো।
বুধবার ১৫ সেপ্টেম্বর বাদ আসর বন্দর প্রেসক্লাবের নতুন ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
বন্দর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মোবারক হোসেন কমল খানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বন্দর থানা অফিসার ইনচার্জ দীপক সাহা, কাউন্সিলর ফয়সাল আহাম্মেদ সাগর, কাউন্সিলর হান্নান সরকার, কাউন্সিলর সুলতান আহম্মেদ প্রমুখ।
তিনি বলেন, আমি আশ্বস্ত হয়ে সেদিন চলে আসলাম। চলে আসার পর আমি যখন অসুস্থ হয়ে ল্যাবএইডে চিকিৎসাধীন তখন তার মনে হল আনোয়ারকে এমন একটা জায়গায় দেয়া উচিত যে জায়গাটা সবচেয়ে যোগ্য যেখানে সবচেয়ে সিনিয়র রাজনীতিবিদ হিসেবে প্রতিষ্টিত করার চেষ্টা করলেন। তিনি টেলিফোনযোগে আমাকে বললেন আনোয়ার আমি তোমাকে সুন্দর মেসেজ দিতে চাই। আমি রাগে গোস্বায় বললাম আপা আর কী মেসেজ দিবেন আমি তো মৃত্যুশয্যায় শায়িত। তিনি বললেন আমি নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের দায়িত্ব তোমার ওপর অর্পণ করতে চাই। আমি বললাম আমি অসুস্থ আমি সেই দায়িত্ব পালন করতে পারবো কীনা তিনি বললেন তা আমার ওপর ছেড়ে দাও তুমি শুধু সুস্থ হয়ে ওঠো এবং মনোনয়ন পত্র জমা দাও আমি তোমার নির্বাচনের সমস্ত দায়িত্ব নিলাম। আমি অসুস্থ অবস্থায় মনোনয়ন জমা দিয়ে আমি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলাম। নির্বাচিত হওয়ার পরেই আমি জননেত্রীর সাথে দেখা করলাম তিনি বললেন আনোয়ার জনপ্রতিনিধি হয়েছ মানুষের কল্যাণে কাজ করো। রাজনীতি মানুষের কল্যানের জন্য মানুষকে যদি ভালবাসতে পারো তাহলে মহান রাব্বুল আলামিন খুশি হবে। আমি সেদিন একই কথা দুইজনের কাছে শুনলাম বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা শেখ হাসিনা। পাঁচটি বছর আমি নারায়ণগঞ্জের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ঘুরে বেড়ালাম উন্নয়নমূলক কাজ আমি করে যাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি রাজনীতি মানুষের কল্যানের জন্য। মানুষের কল্যাণ করলে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংকও বাড়বে। দম্ভ অহংকার ও সন্ত্রাসী করলে আওয়ামী লীগের ভোট বারবে না। আমি সন্ত্রাস করিনা ঝুট ব্যবসা টেন্ডারবাজিও করি না। আমার কোন অনুসারীও তা করে না। সেকারণেই মানুষ আমাকে ভালবাসে ক্লিন ইমেজের নেতা হিসেবে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেয়।
আনোয়ার হোসেন আরো বলেন, আসলে আমি একজন রাজনীতিবিদ। পঞ্চাশ বছর রাজনীতির জীবন। বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে আসতে পেরেছিলাম। বঙ্গবন্ধু আমাকে বলেছিলেন ছাত্রজীবনে ভাল ছাত্র হও, লেখাপড়া করো মানুষের কল্যাণ করো। মানুষকে ভালবাসলে মহান রাব্বুল আলামিনকে খুশি করা যায়। মহান রাব্বুল আলামিন যদি খুশি হন তাহলে মৃত্যুর পরের জীবনে ভাল থাকা যায়। রাজনীতি মানুষের কল্যানের জন্যই, এটাই আমি বঙ্গবন্ধুর কাছে শিখেছিলাম। ছাত্রজীবনে হঠাৎ এক সময় রাতের অন্ধকারে বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে ফেললাম। আমরা ভাবতে পারিনি বঙ্গবন্ধুর মত একজন নেতাকে আমরা হারিয়ে ফেলব। আন্তর্জাতিক চক্রান্তের কারনে সেদিন স্বাধীনতা বিরোধীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল। বাঙালিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ব্যার্থ প্রমান করার জন্য এই হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়। আমরা সেদিন হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। ছাত্র মানুষ আমরা কী থেকে কী করবো বুঝতে পারছিলাম না। শপথ নিলাম বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করবো। সেদিন বিবেকের তাড়নায় মাঠে নামলাম, মিছিল করলাম গুটিকয়েক ছাত্র নেতাদের নিয়ে। উনিশ মাস জেল খাটার পর ছাত্রলীগের দায়িত্ব পেলাম সারা নারায়ণগঞ্জে ছাত্রলীগকে সংগঠিত করতে শুরু করলাম। এমন এক অবস্থার মাঝেই আমরা জাতির পিতার আদর্শের উজ্জীবিত হলাম। ভাবতে শুরু করলাম এমন একজন নেতার অধীনে বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের যে স্বপ্ন জাতির জনক দেখেছিলেন সে স্বপ্ন বাস্তবায়িত হোক। আল্লাহর রহমতে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা বাংলার রাজনীতিতে আসলেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হলেন। তিনি এসে বললেন আমার চাওয়া পাওয়ার কিছু নাই। আমি যা হারিয়েছি তা আর পাবো না। আমার বাপ ভাই হারিয়েছি আমি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজকে সম্পন্ন করতে চাই। আমরাও তার পেছনে ঐক্যবদ্ধ হলাম আন্দোলন সংগ্রাম করলাম। তার মাধ্যমে তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এমন একটি সরকার প্রতিষ্ঠিত হল যার মাধ্যমে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার প্রতিষ্ঠিত হল।
তিনি বলেন, সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তিনি চেষ্টা করলেন বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ তার স্বপ্ন তিনি বাস্তবায়ন করবেন। তৎকালীন জিয়াউর রহমানের সরকার ইনডেমনিটি আইন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জারি করলেন বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার করা যাবে না। জাতির জনকের কন্যা আইনের মাধ্যমে সংসদে সেই আইন বিলুপ্ত করে শেখ মুজিব হত্যার বিচার করার রুদ্ধ অবস্থা থেকে পরিত্রানের আইন পাস করলেন। ইতিমধ্যে তিনি যারা বঙ্গবন্ধুর স্বঘোষিত হত্যাকারি তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করালেন। আজ কেউ কেউ ফাঁসি আদেশ কার্যকর হয়েছে এবং কেউ বিদেশে পলায়ন করে আছে।
আনোয়ার আরো বলেন, জাতির জনকের কন্যার নেতৃত্বে আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে তিনি বললেন বঙ্গবন্ধু হত্যার জন্য যা যা করা দরকার তা তা করবো এবং তিনি তাই করলেন। তিনি বাংলাদেশে জাতির জনকের হত্যার পর যারা রাষ্ট্রীয় ভাবে পুনর্বাসিত করল তাদের আইনের আওতায় এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করালেন। ২০০১ এ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পরে তাদের আবারও গ্রাস করা শুরু করল আমরা আবারও আন্দোলন সংগ্রাম করলাম। আমরা আন্দোলন সংগ্রাম শুরু করলাম তার মাধ্যমে আবারও শেখ হাসিনার সরকার প্রতিষ্ঠিত হল তিনি তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার চেষ্টা করছেন।