প্রিন্ট নারায়ণগঞ্জঃ ১৯৯২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের পর দীর্ঘ ২৯ বছর পার হলেও নির্বাচনের মুখ দেখেনি ফতুল্লা ইউনিয়নের জনগণ। ফতুল্লা ইউনিয়নের নির্বাচন ঠেকাতে সীমানা সংক্রান্ত জটিলতা দেখিয়ে ১৯৯৬ সালে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলার বাদী ছিলেন ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের কুতুবআইল এলাকার বাসিন্দা কদর আলী।
এছাড়া ও এই ইউনিয়কে ঘিরে ২০০২ সালে হানিফ মাতবর নামে এলাকার আরও এক স্থানীয় ব্যক্তি হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। রিট পিটিশন দায়ের করলেও ২০০৬ সালে মামলাটি খারিজ করে দেন আদালতের বিচারক। তবে মহামান্য উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন চলমান থাকায় ফতুল্লা ইউনিয়নে নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি।
অবশেষে রিট পিটিশন মামলাটিও খারিজ করে হাইকোর্ট। এতে ফতুল্লা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নির্বাচনী আমেজ সৃষ্টি হলেও শেষ পর্যন্ত তফসিল ঘোষনা করেনি নির্বাচন কমিশন। ফলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মেম্বার ও মৃত মেম্বাদের স্বজনদের সমন্বয়ে ঢিলে ঢালা ভাবে চলছে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম।
সূত্র জানায়, ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের ৭ জন সদস্য অনুপস্থিত রয়েছে। ৭ জন সদস্যর মধ্যে চেয়ারম্যান সহ পুরুষ মেম্বার ৫ জন মৃত্যু বরণ করেন। এরা হলেন- নুর হোসেন চেয়ারম্যান,১ নং ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুর রসিদ, ২ নং ওয়ার্ড মেম্বার ছমির উদ্দিন, ৩ নং ওয়ার্ড মেম্বার বরকত, ৫ নং ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুল মালেক, ৮ নং ওয়ার্ড মেম্বার আক্কাস আলী এবং সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার আমেনা বেগম স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন।
জানাগেছে, ৩.৬১ বর্গমাইল আয়তনে ১০ টি মৌজায় ১১টি গ্রাম নিয়ে ১ লাখ ১৭ হাজার ৮৩৩ জন লোক সংখ্যা রয়েছে। এছাড়া ও শিল্প সমৃদ্ধির নগরী হিসাবে খ্যাত ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় রয়েছে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারের কার্যালয়।
অপরদিকে সদর উপজেলা, এলজিডি, জেলা পরিষদ, কর অফিস, রেজিস্টার অফিস, শিক্ষা অফিসসহ সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ছেয়ে গেছে এই ইউনিয়ন। স্কুল কলেজ থেকে শুরু করে বিনোদন পার্ক এমনকি দর্শনীয় স্থান রয়েছে এই ইউনিয়ন জুড়ে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা ফতুল্লা থানা এলাকা ৫ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এই পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্যে ৪ টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও ফতুল্লা ইউনিয়নের নির্বাচন নিয়ে কারো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। আর নির্বাচন না হওয়ায় ফতুল্লা ইউনিয়নের ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিতে পারছেনা।
নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক শর্তে লালখাঁর স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান স্বপন নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত। এলাকার উন্নয়নে সে এগিয়ে আসেনি। যদি এগিয়ে আসতো তাহলে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের রাস্তাঘাট এমন বেহাল অবস্থা হতো না। এখানে সামান্য বৃষ্টি হলেই এলাকার অলিতে গলিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
তবে ফতুল্লা ইউনিয়ন বাসির অভিযোগ একটা প্রভাবশালী মহলের প্রভাবে মামলা খারিজ হওয়ার পরও এই ইউনিয়নে নির্বাচন হচ্ছে না। তাদের দাবী যদি ঐ প্রভাবশালী মহল একটু ইশারা করে তাহলে নির্বাচন হওয়াটা কঠিন বিষয় না।
এবিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ মতিউর রহমানের মোবাইলে ফোন করলে তিনি মোবাইলটি রিসিভ করেননি।
এবিষয়ে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান স্বপন বলেন, রীতিমত আমি চেয়ে আসছি ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হোক। নির্বাচন হলে আমার কোন আপওি নাই। কিন্তু কি কারনে নির্বাচন হচ্ছে না এবিষয়ে আমি বলতে পারবো না। তবে আমি সব সময় নির্বাচনের পক্ষে বিভিন্ন মিডিয়াতে বক্তব্যে দিয়ে আসছি।
এদিকে অনতিবিলম্বে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনী ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনার জন্য নির্বাচনের দাবী জানিয়েছে ফতুল্লা ইউনিয়ের জনগণ।