বিশেষ প্রতিনিধি : সোনারগাঁয়ে কথিত এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অন্যের স্ত্রীকে ফুসলিয়ে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকারসহ ভাগিযে নিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। প্রতারনার শিকার পরিবারটির সাজানো গোছানো সংসার যেন তছনছ করে দিয়েছে অভিযুক্ত ঐ কথিত সাংবাদিক। এঘটনায় নারায়ণগঞ্জ আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বাদীর মামলাসূত্রে জানা যায়, সোনারগাঁ পৌরসভার হামছাদী পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত, আলী আজগর সরকারের ছেলে মোঃ মাসুদুর রহমান সরকার একজন ব্যবসায়ী (ফার্মাসিষ্ট)। একই গ্রামের মৃত, সুবেদ আলী প্রধানের মেয়ে রওশন আরা জাহানের সাথে গত ২০০৫ইং সালে ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামী ও পরিবারের সহযোগীতায় স্ত্রী রওশন আরা জাহান বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের ১১২ নং দামুদরদী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে চাকুরী পান। তাদের সংসারে আব্দুর রহমান (আলিফ) নামে ১৪ বছরের একটি পুত্র সন্তান ও পাঁচ বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বর্তমানে আব্দুর রহমান (আলিফ) স্থানীয় একটি স্কুলে ৮ম শ্রেণীতে পড়াশুনা করছে। শান্তিপূর্ণভাবেই চলছিলো তাদের সংসার জীবণ।
ঘটনার বিবরনে আরও জানা যায়, মোঃ মাসুদুর রহমান সরকারের বিবাহিতা স্ত্রী রওশন আরা জাহানের সাথে উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের কান্দারগাঁও গ্রামের আজিমউদ্দিনের ছেলে কথিত সাংবাদিক মাজহারুল ইসলামের সাথে পূর্বে পরিচয় ছিলো। দীর্ঘ পরিচয়ের সূত্র ধরে তাদের মাঝে একসময় অবৈধ প্রেমের সম্পর্ক তৈরী হয়। প্রায় এক বছর যাবত কথিত সাংবাদিক মাজহারুল ইসলাম তার পরিচিত প্রেমিকা রওশন আরা জাহানের সাথে গোপনে তাদের বাড়ীতে আসা-যাওয়া করতো এবং পরকীয়া প্রেম চালিয়ে যেতে থাকে। ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে স্বামী মোঃ মাসুদুর রহমান সরকার তার স্ত্রীকে বাঁধা প্রদান করেন এবং কথিত সাংবাদিক মাজহারুলকেও তিনি নিজেই তার বাড়ীতে আসতে নিষেধ করেন। কিন্তু তার স্ত্রী রওশন আরা জাহান তাতে কোনো কর্নপাত না করে কথিত সাংবাদিক মাজহারুল ইসলামের সাথে তাদের পরকীয়া চালিয়ে যেতে থাকে ও বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতে থাকে। বিভিন্ন লোক মারফতে বিষয়টি জানতে পেরে এনিয়ে নিজের স্ত্রীকে সতর্ক ও ভালো হয়ে চলার পরামর্শ দেন ভূক্তভোগী স্বামী মোঃ মাসুদুর রহমান সরকার। কিন্তু তার স্ত্রী রওশন আরা জাহান সেদিকেও কোনো কর্নপাত না করে কথিত সাংবাদিক মাজহারুলের সাথে তার পরকীয়া প্রেম চালিয়ে যেতে থাকে। এনিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বেশ কয়েকবার ঝগড়া ও সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হয় এবং বিষয়টি মোঃ মাসুদুর রহমান সরকার তার শ্বশুর বাড়ীসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে সমাধানের জন্য চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
মামলার বাদীসূত্রে আরও জানা যায়, বাদী মোঃ মাসুদুর রহমান সরকার তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ও তার বাড়ীতে সন্তানরা থাকাবস্থায় বেশ কয়েকবার গোপনে কথিত সাংবাদিক মাজহারুল ইসলাম বিবাহিতা নারী রওশন আরা জাহানের সাথে মিলিত হতো। বাড়ীতে দু’টি শিশু সন্তান থাকার পরও তারা উভয়ে তাদের গোপন লীলা চালিয়ে যেতো। কথিত সাংবাদিক মাজহারুল ইসলাম নিজেও একজন বিবাহিত। তার নিজের সংসারে স্ত্রী-সন্তান থাকা সত্ত্বেও সে অন্যের স্ত্রীর প্রতি কু-দৃষ্টি দেয়। এদিকে ভূক্তভোগী মোঃ মাসুদুর রহমান সরকারের স্ত্রী রওশন আরা জাহান তার কর্মস্থলে যাতায়াত ভাড়া, সংসারের বিভিন্ন খরচাদি ও তার কন্যা সন্তানের প্রয়োজনীয় খরচ স্বামী মোঃ মাসুদুর রহমান সরকারের কাছ থেকে সমযমতো আদায় করে নিতো। এমনকি তার স্বামীর কাছ থেকে ব্যবসার সকল অর্থ ও নিজের চাকরীর সব বেতনের টাকা নিজের নামে ব্যাংক একাউন্ট করে সেখানে জমা রাখতো। স্ত্রীর অনৈতিক চলাফেরা ও তার গোপন অভিসার এবং কথিত প্রেমিক সাংবাদিক মাজহারুল ইসলাম থেকে তাকে দুরে রাখতে স্বামী মোঃ মাসুদুর রহমান সরকার সোনারগাঁ থেকে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পূর্বপাড়া এলাকায় গিয়ে একটি বাড়ী ভাড়া নিয়ে সেখানে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বসবাস করতে থাকেন। সেসময় তিনি তার ব্যবসা বৃদ্ধি ও প্রসারের জন্য বিভিন্ন মাধ্যম থেকে নেয়া ১২,২৫,০০০/- (বারো লক্ষ পঁচিশ হাজার টাকা) তার ভাড়া বাড়ীর স্টিলের আলমারিতে জমা রাখেন। বিষয়টি তার স্ত্রী রওশন আরা জাহানও জানতো। কথিত সাংবাদিক মাজহারুল ইসলাম তার প্রেমিকা রওশন আরা জাহানকে সোনারগাঁয়ের সেই পুরনো ঠিকানায় না পেয়ে তার মোবাইলে যোগাযোগ করে সেই ঠিকানায় হাজির হয়ে পূণরায় সেই বাড়ীতে আসা-যাওয়া চালিয়ে যেতে থাকে এবং প্রেমিকা রওশন আরা জাহানের সংসারে থাকা দু’টি শিশু সন্তানদের অগোচরে তাদের গোপন অভিসার চালিয়ে যেতো। এক পর্যায়ে বেশ কিছুদিন পর প্রেমিকা রওশন আরা জাহানকে ফুসলিয়ে, ভূলিয়ে তাকে বিয়ে করার মিথ্যে আশ্বাস ও বিভিন্ন প্রলোভন দেখায় কথিত প্রেমিক সাংবাদিক মাজহারুল ইসলাম। বেশ কিছুদিন পর ভূক্তভোগী মোঃ মাসুদুর রহমান সরকারের ভাড়া বাড়ীতে তার অনুপস্থিতিকে বাড়ীর দু’টি শিশু সন্তাানের চোখে ধুলো দিয়ে ও মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে তাদেরকে ছেড়ে প্রেমিকা রওশন আরা জাহান তার স্বামীর ব্যবসায়ীক কাজে বাড়ীর আলমারীতে রাখা সমুদয় অর্থ ও ব্যবহৃত দু’টি মোবাইল ফোন এবং ৮ ভরি স্বর্ণালংকার আনুমানিক মূল্য ৪,৫০,০০০/- (চার লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা নিয়ে কথিত সাংবাদিক মাজহারুল ইসলামের সাথে পালিয়ে যায়।
পরবর্তীতে মোঃ মাসুদুর রহমান সরকার তার ছেলে আলিফকে মোবাইলে কল দিলে ঘটনাটি জানতে পারেন এবং ঘন্টাখানেক পর বাসায় ফিরে দেখতে পান যে, বাড়ী-ঘর অগোছালো। তখনই তিনি তার স্ত্রীর মোবাইলে কল দিয়ে যোগাযোগ করলে তা বন্ধ পাওয়া যায় এবং সাথে সাথে তিনি তার বাড়ীতে রাখা আলমানী খুলে দেখতে পান যে সেখানে কোনো টাকা-পয়সা ও স্ত্রীর ব্যবহৃত কোনো স্বর্নালংকার নেই। তিনি বুঝতে পারেন, তার ব্যবসায়ীক কাজে আলমারীতে রাখা সমুদয় অর্থ ও স্বর্ণালংকার নিয়ে তার স্ত্রী রওশন আরা জাহান কথিত প্রেমিক সাংবাদিক মাজহারুল ইসলামের সাথে পালিয়ে গেছেন। এক পর্যায়ে তিনি কথিত সাংবাদিক মাজহারুল ইসলামের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে তাতে যোগাযোগ করলে কথিত সাংবাদিক মাজহারুল ইসলাম জানায়, তারা দু’জন অজ্ঞাত এক জায়গায় রয়েছে। তবে এ বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে সন্তানসহ ভূক্তভোগী মোঃ মাসুদুর রহমান সরকারকে মেরে ফেলার হুমকী প্রদান করে কথিত সাংবাদিক মাজহারুল ইসলাম। ঘটনাটি ভূক্তভোগী মোঃ মাসুদুর রহমান সরকার তার আত্মীয়স্বজনসহ এলাকার গন্য মান্য ব্যক্তিদেরকে অবগত করে। এক পর্যায়ে তার স্ত্রীকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজিও অব্যাহত রাখে। না পেয়ে ঘটনার কিছুদিন পর গত বছরের ১৯ মার্চ ২০২১ইং ভূক্তভোগী মোঃ মাসুদুর রহমান সরকার সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। যার নং-৮১১। তাতেও কোনো সুফল না পেয়ে তিনি অবশেষে নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আদালতে মামলা দায়েরের পর কথিত সাংবাদিক মাজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করেন বিজ্ঞ আদালত। এঘটনায় কথিত সাংবাদিক মাজহারুল ইসলাম বেশ কিছুদিন আত্মগোপনে চলে যায় এবং সময় ও সুযোগ বুঝে আদালত থেকে মোটা অংকের অর্থ ব্যয় করে আগাম জামিন নেয় সে। তার এহেন বিতর্কিত কর্মকান্ডে একটি সাজানো গোছানো সংসার তছনছ হয়ে যায় এবং দু’টি অবুঝ শিশু সন্তানের ভবিষ্যৎ তাদের মায়ের কাছ থেকে দুরে সরিয়ে রেখে ধ্বংসের পথে ঢেলে দিয়েছে। এমন খবরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জসহ সোনারগাঁয়ের সর্বমহলেও কথিত সাংবাদিক মাজহারুল ইসলামকে নিয়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, কথিত সাংবাদিক মাজহারুল ইসলামের প্রকৃত নাম মাজহারুল ইসলাম রতন। সে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে সাংবাদিকতার পেশাটিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে দূর্বল প্রকৃতির মানুষকে টার্গেট করে তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিত। এমনই আরেকটি ঘটনা জানা গেছে ও একটি ভিডিও সংরক্ষিত রয়েছে, যা গত বছর ফেসবুক (সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম) এ ভাইরাল হয়ে তা সোনারগাঁবাসী তথা সকল সাংবাদিক মহলের নিকট সমালোচনার জন্ম দেয়। কথিত সাংবাদিক মাজহারুল ইসলাম রতন এক কৃষকের ছেলেকে সরকারী (পুলিশে) চাকরী পাইয়ে দেয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে তা আত্মসাৎ করে ফেলে। পরে সেই কৃষকের ছেলেকে আর চাকরী দিতে পারেনি, তবে ভূক্তভোগী টাকা ফেরত চাইলে কথিত সাংবাদিক মাজহারুল ইসলাম রতন ঐ কৃষকের ছেলেকেসহ তার পরিবারের সদস্যদেরকে মিথ্যে মামলা, হয়রানীসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকী প্রদান করে বলেও অভিযোগ রয়েছে। কথিত সাংবাদিক মাজহারুল ইসলাম রতন বিএনপি’র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে সে নিয়মিত বিএনপি’র স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা আজহারুল ইসলাম মান্নানের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম করে বেড়ায় বলে অভিযোগ রয়েছে।
এব্যাপারে সাংবাদিক মাজহারুল ইসলাম রতনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি।