এ বিষয়ে সম্প্রতি এই হাফেজ মামুন’র বিরুদ্ধে তার দ্বিতীয় স্ত্রী মেরিজা বেগম (৩৯) আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানার গুরছাকাটি গ্রামের চান্দু গাজী’র মেয়ে মেরিজা।
স্ত্রী মেরিজা বেগম তার বক্তব্যে বলেন- তিনি একটি এনজিওতে চাকুরী করতেন। নারায়ণগঞ্জের পাগলায় স্বামী সহ এক ছেলে সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন। ১৭ বছর ধরে চলছিল তাদের বিবাহীত সংসার। স্বামী দিনমজুর হওয়ায় সংসারের আর্থিক কষ্ট দূর করতে তিনি একটি এনজিওতে চাকুরী করতেন। এ সূত্রে ঢাকার রায়েরবাগ এলাকায় হাফেজ মামুন’র সাথে তার পরিচয় হয়। একজন হাফেজ হয়েও উচ্চ বিলাসী জীবন যাপনের প্রতিশ্রুতী দিয়ে মেরিজা’র ১৭ বছরের সংসারজীবন ভেঙে দিয়ে প্রথম স্বামীকে তালাক দিতে প্রতারক হাফিজ মামুন বাধ্য করেন। প্রথম স্ত্রী-সন্তানের কথা গোপন করে ইসলামিক বিধান মোতাবেক নিকাহ্ রেজিস্টার আইন না মেনে ২০১৩ সালের নভেম্বরে ৫০ টাকার স্ট্যাম্পে নিজের হাতে লিখে অবৈধ বিবাহের ছলনা করে মেরিজা’র সাথে শারীরিক সম্পর্ক শুরু করেন।
হাফেজ মামুন ও মেরিজা’র এ অবৈধ বিয়ের ৯ বছরের সংসার জীবনে বর্তমানে ৮ বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।
চতুর ও প্রতারক মামুন অবৈধ বিয়ের পর থেকে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার নাম করে মেরিজাকে দিয়ে বিভিন্নজনের কাছে ঋণ করিয়ে অনেক টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি। এসব ঋণের টাকা এখনো পরিশোধ করেনি মামুন। এ টাকা ফেরত না দিয়েই মেরিজাকে বাবার বাড়ি ও আত্মীয়দের নিকট থেকে আরও টাকা এনে দিতে চাপ প্রয়োগ করেন হাফেজ মামুন। এখন মেরিজা’র মাথায় প্রায় ৫/৬ লক্ষ টাকা ঋণের বোঝা হয়ে আছে।
এ সকল ঋণের টাকা পরিশোধ, সন্তানের ভরণপোষণ, সংসার খরচের টাকা ও দেশের আইন অনুযায়ী বিয়ে রেজিস্ট্রির জন্য মেরিজা মামুনকে চাপ প্রয়োগ করলে এবং পারিবারিকভাবে স্ত্রীর মর্যাদা দাবী করলে প্রতারক মামুন দীর্ঘ ৯ বছরের সংসার জীবনের সমাপ্তি করতে উঠেপরে লাগেন।
স্ত্রী সন্তানের ভরণপোষণ বন্ধ করে দিয়ে তাদের ভবিষ্যতের ব্যবস্থা না করে স্ত্রী ও তার ঔরষজাত সন্তানকে বিদায় করে দেবার পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছেন। মামুন তাদের কথা চিন্তা না করে গ্রামে থাকা প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে এসে রায়েরবাগ মাদ্রাসার ফ্ল্যাটে বসবাস শুরু করেন।
প্রতারক মামুন’র এমন ব্যবহারে মেরিজা জানতে চাইলে মামুন মেরিজাকে মারধর সহ বড় ধরনের ক্ষতি করার হুমকিধামকি দিলে মেরিজা মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন। এবং সব হারিয়ে প্রায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে মেরিজা বর্তমানে নারায়ণগঞ্জে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। কোনো রকম দিক পাশ না পেয়ে মারিজা নারায়ণগঞ্জ জজ কোর্ট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।
হাফেজ মানুন সম্পর্কে মেরিজা বলেন- ‘মামুন এই মাদ্রাসার সাইনবোর্ড ব্যবহার করে নামে-বেনামে চাঁদাবাজি করে। সে একজন প্রতারক। এছাড়া সে মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মা-বোনদের সাথে নানা অজুহাতে যোগাযোগ করে প্রেম নিবেদন সহ শারিরীক সম্পর্ক তৈরি করার প্রস্তাব দিয়ে থাকে।’
সরেজমিনে গিয়ে হাফেজ মানুনকে পাওয়া যায়নি। তবে তার মাদ্রাসার চিত্র দেখলে বুঝার উপায় নেই এটি বাসাবাড়ি নাকি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফ্ল্যাটের এক রুমে প্রতারক মামুন তার প্রথম স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন। আর অন্য দুটি রুমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও থাকার ব্যবস্থা করেছেন। তাদের কাছে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার কোন ধরনের অনুমোদিত কাগজপত্র নেই বললেই চলে।
প্রতারিত মেরিজা হাফেজ মানুন’র এ ধরনের প্রতারনার জন্য স্থানীয় থানা পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেছেন। সেইসাথে এত বড় প্রতারনার জন্য তার শাস্তি দাবী করেছেন।
এ বিষয়ে হাফেজ মামুনকে না পেয়ে তার মুঠোফোনে কথা বললে তিনি বলেন- আমি ইসলামের বিধি মোতাবেক বিয়ে করেছি। তবে রেজিষ্ট্রি করিনি। আমার স্ত্রী ও আত্মীয়-স্বজন আমার দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়টি জানতোনা। বর্তমানে তারা জেনে যাওয়ায় আমি সমস্যায় পড়ি এবং তাদের চাপের মুখে পড়ে বলেছি মেরিজাকে ছেড়ে দিবেন। আর টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন- আমি টাকা যা নিয়েছি তা পরিশোধ করেছি। বর্তমানে আর্থিক অবস্থা ভালো নেই বলে মেরিজার সংসার চালানোর খবচ দিতে আমার সমস্যা হচ্ছে।