প্রিন্ট নারায়ণগঞ্জঃ রমজানের শেষ দিকে এসে বিপণিবিতানগুলোতে ভিড় বেড়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে মার্কেট সরগরম হয়ে উঠছে। দামাদামিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। নগরীর প্রতিটি বিপণিবিতানের একই চিত্র। লোকারণ্য মার্কেটে বেচাকেনাও হচ্ছে বেশ। এবার একটু আগেভাগেই কেনাকাটা সেরে নিচ্ছেন সবাই। একেতো ঈদের ছুটি আগে শুরু হবে, তার ওপর প্রায় সবার বেতন হয়েছে। এই দুইয়ের কারণে মার্কেটে ভিড় বেড়েছে। ভালো দামে পছন্দের পণ্য কেনার জন্য এ মার্কেট থেকে ও মার্কেটে ঘুরছেন অনেকে। ক্রেতাদের এমন চাহিদার কারণে প্রায় সবগুলো মার্কেট মধ্যরাত পর্যন্ত খোলা রাখা হয়েছে।
বিক্রেতাদের অনেকেই বলেছেন, দুপুরের পর থেকেই মার্কেটে ক্রেতা আসতে শুরু করেন। বিকেলের দিকে মার্কেট জমতে শুরু করে। তবে সন্ধ্যার পর থেকে বাড়তে থাকে ঈদের মূল কেনাকাটা, চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। এ বছর পাঞ্জাবির ভালো চাহিদা দেখতে পাচ্ছি।
এদিকে, ক্রেতারা জানাচ্ছেন তাদের অসহায়ত্বের কথা। তাঁরা বলছেন, জিনিসের দাম তুলনামূলক বেশি। টানাপড়েনের মাঝে ঈদের বাজেট ফেল করে যাচ্ছে। যেহেতু বিক্রেতাদেরই বাড়তি দামে জিনিস কিনতে হচ্ছে তাই এর প্রভাব আমাদের ওপরও পড়ছে। দাম কমতে পারে বলে যে ধারণা ছিল তা মনে হয় আর হবে না। আসলে দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। কারণ কেউ তো আর লোকসান দিয়ে মালামাল বিক্রি করবে না। বরং অনেকের ধারণা, ঈদের আগে দাম বাড়বে। তাই এখন থেকেই মার্কেটে কেনাকাটা সেরে ফেলছেন।
শুধু বিপণিবিতানগুলোই নয়, নগরীর ফুটপাত ও পথের পাশে ভ্যানগুলোতেও জমে উঠেছে ঈদের বাজার। কালিরবাজার স্বর্ণপট্টি মোড় থেকে চাষাঢ়া সমবায় মার্কেট পর্যন্ত ফুটপাতে বাহারি পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। হাঁক-ডাক দিয়ে ক্রেতা আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। তীব্র রোদেও যেন দম ফেলার সময় নেই তাদের। মার্কেটগুলোর চেয়েও যেন এখন ফুটপাতে বেশি ভিড়। এর কারণ সম্পর্কে জানাতে গিয়ে মাসদাইর থেকে আগত কলেজ শিক্ষার্থী স্বর্ণা বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাবে একটু কম মূল্যে পছন্দের জিনিস কিনতেই ফুটপাতে আগ্রহ বাড়ছে মানুষের। তাছাড়া অনেক সময় নিয়ে পণ্যগুলো দেখে কেনাকাটা করা যায়, যেটা মার্কেটগুলোতে সম্ভব হয় না।
কালিরবাজার ও চাষাঢ়ার ফুটপাতের কয়েকজন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পথের দু’পাশে বেচাকেনা চলে। তবে ফুটপাত থেকে শুরু করে সড়কের একটি অংশ দখলে নিয়ে এমন ব্যবসা করায় নগরবাসীরও অভিযোগের অন্ত নেই। তীব্র গরমের মধ্যে যানজট ও ফুটপাত-সড়ক দখল করে এমন ব্যবসা চালানোয় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের।
শহরের দেওভোগ চুনকা সড়ক, মাসদাইর শেরেবাংলা সড়কে দিনভর জ্যাম। বিকালে চাষাঢ়া থেকে কালিরবাজার হয়ে ডিআইটি পর্যন্ত পুরোটাই জ্যাম ছিল। রিকশাচালক আবু আহমেদ জানালেন, এটা ঈদের আগমনী বার্তা। ঈদ পর্যন্ত এই রাস্তার এমনই থাকবে।
কালিরবাজারে ফুটপাতের জনস্রোত ঠেলে মার্কেটে গিয়েও দেখা গেল ক্রেতামুখর আনাগোনা। ফেন্ডস সুপার মার্কেটে গজ কাপড় কিনতে এসেছিলেন শারমিন সুলতানা। বললেন, এখনই কিনে টেইলারে বানাতে না দিলে ঈদের আগে জামা পাওয়া অসম্ভব। রোজা শুরুর আগেই আসতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সময় হয়ে উঠেনি। ভিড় হবে জেনেও আজকেই এসেছি কাপড় কিনতে। ম্যাচিং করে জামার কাপড় কেনার পর সালোয়ারের কাপড় ও ওড়নাও কিনবো, বাচ্চাদের কিছু কাপড়ও কিনতে হবে। রমজানের মাঝামাঝি থেকে মার্কেটে ভিড় বেড়ে গেছে।
নগরীর ২নং রেলগেটস্থ আলমাস টাওয়ারসহ ডিআইটি মার্কেট, টপটেন, সমবায় মার্কেট, শান্তনা মার্কেট, রিভারভিউ মার্কেট, আল জয়নাল প্লাজা, মার্ক টাওয়ার, সায়ামপ্লাজা ও লুৎফা টাওয়ারসহ প্রায় মার্কেটে নেমেছে ক্রেতাদের ঢল।
আলমাস টাওয়ারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, অনেকেই রোজার শুরুর থেকে ঈদের কেনাকাটা করা শুরু করেছেন। আস্তে আস্তে ক্রেতাদের সংখ্যা বাড়ছে, বিক্রিও মোটামুটি সন্তোষজনক। ১০ এপ্রিল উদ্বোধনের পর থেকেই আলমাস টাওয়ার বেশ জমজমাট। আড়ং, লারিব, সেইলর, মীনাবাজার পয়েন্ট খুব জমজমাট।
বর্ষণসুপার মার্কেটে গিয়েও একই চিত্র দেখা গেল। ছোটদের পোশাক কিনছিলেন নাইমা সুলতানা। বললেন, যত দিন গড়াবে ভিড় ততই বাড়বে। এত ভিড়ে বাচ্চা সাথে নিয়ে কেনাকাটা করা ভীষণ মুশকিল। তাই আগেভাগেই কেনাকাটা সারতে চেয়েছিলাম। শেষের দিকে প্রচুর ভিড় থাকে। তখন পোশাক দেখার সুযোগ থাকে না। বিক্রেতারা ব্যস্থ থাকেন, দামাদামি করারও সুযোগ থাকে না। আবার নতুন কালেকশনগুলো পরখ করে দেখার বিষয় থাকে। তাছাড়া আগেভাগে কেনাকাটা করে নিলে যদি কোনো কিছুর ঘাটতি থাকে সেটা সুযোগ করে পরে নেয়া যায়।
সারা বছরের যতগুলো উৎসব রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কেনাকাটা হয় ঈদুল ফিতরকে ঘিরে। তাই আগেভাগেই পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়েছেন দোকানিরা। নতুন নতুন বাহারি ডিজাইন