প্রিন্ট নারায়ণগঞ্জ: হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক প্রিজন ভ্যান থেকে তার অনুসারী ও নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।
সত্য কখনো চাপা থাকে না, সত্যের জয় একদিন হবেই। আমার মুক্তির দরকার নাই, সত্যের মুক্তি দরকার। সত্যের মুক্তির জন্য তোমরা দোয়া করো। তোমরা হিজরত করবে আল্লাহর পথে। ইনশাআল্লাহ সত্যের জয় হবেই হবে।
মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় দায়ের করা ধর্ষণ মামলায় তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ ও আদালতের কার্যক্রম শেষে কাশিমপুর কারাগারে নিয়ে যাওয়ার সময় প্রীজন ভ্যানের জানালা থেকে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন তিনি। এসময় আদালতপাড়ায় উপস্থিত নেতাকর্মীরাও আবেগাপ্লাবুত হয়ে পড়েন। পরে পুলিশ নেতাকর্মীদের সড়িয়ে দেয়।
এরআগে পুলিশের প্রিজনভ্যানে ওঠানোর সময় একদল অনুসারীসহ মাদরাসার ছাত্ররা হাদিসের কিতাব নিয়ে হাজির হন। তারা সবাই মামুনুল হকের উদ্দেশ্যে বলতে থাকেন, হুজুর আমরা কিতাব নিয়ে এসেছি। আপনি আমাদের ছবক দেন, দরস দেন। আবার কেউ কেউ কান্না করে বলতে থাকেন আপনার মুক্তির জন্য দোয়া করি।
এ সময় মামুনুল হক বলেন, আল্লাহ ও তার রাসূলের জন্য হিজরত করার অর্থ হলো দুনিয়ার সবকিছু ছাড়া। আল্লাহ ও তার রাসূলকে খুশি করার জন্য সমস্ত স্বার্থকে ত্যাগ করা। মিথ্যাকে ত্যাগ করা সমস্ত অন্যায়কে ত্যাগ করা।
এই হিজরতের শিক্ষা দিয়েই বুখারী শরীফের কিতাব শুরু হয়েছে। তোমরা দৃঢ় এই চেতনাকে ধারণ করবা। মিথ্যা নয় সত্যকে আকরে ধরবা।
এদিকে মামুনুল হক এর অনুসারীসহ মাদরাসার ছাত্রদের তার বক্তব্যের ভিডিও ধারণ করতে দেখা যায়।
আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট একেএম ওমর ফারুক বলেন, মামুনুল হক তার অনুসারীদের শক্ত থাকার কথা বলেছেন। সত্যের ওপর অবিচল থাকার কথা বলেছেন। সত্যের একদিন জয় হবে; সত্য মিথ্যা দিয়ে ঢাকা যায় না এসব কথা বলেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান জানান, তাকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে নিয়ে আসা ও নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নেতাকর্মীরা জড়ো হতে চাইলে পুলিশ সেটি হতে দেয়নি। তবে প্রিজন ভ্যানের জানালা দিয়ে তিনি কোনো বক্তব্য দিয়েছেন কিনা সেটি তিনি জানেন না বলে জানান।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টে এক নারীর সঙ্গে অবস্থান করছিলেন মামুনুল হক। ওই সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এসে তাকে ঘেরাও করেন। পরে স্থানীয় হেফাজতের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা এসে রিসোর্টে ব্যাপক ভাঙচুর করেন এবং তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যান।
ঘটনার পর থেকেই মামুনুল হক মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসায় অবস্থান করে আসছিলেন। এ সময় পুলিশ তাকে নজরদারিতে রাখে। এরপর গত ১৮ এপ্রিল মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মামুনুলকে।
পরে এই ঘটনায় ৩০ এপ্রিল সোনারগাঁ থানায় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ মামলা করেন ওই নারী। তবে ওই নারীকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করে আসছেন মামুনুল হক।
এরপর ২৪ নভেম্বর প্রথম দফায় মামুনুল হকের উপস্থিতিতে কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণার সাক্ষ্য নেন আদালত। একই সঙ্গে ওই বছরের ৩ নভেম্বর মামুনুল হকের বিরুদ্ধে করা ধর্ষণ মামলায় বিচারকাজ শুরুর আদেশ দেওয়া হয়।