নারায়ণগঞ্জের ১০০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে (ভিক্টোরিয়া হিসেবে পরিচিত) বেড়েই চলছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। গত ১০ দিনে গড়ে ১০০ জনেরও বেশি রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে বলে জনিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চিকিৎসকরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, ওয়াসার দূষিত পানি এবং বাহিরের খাবার খাওয়ার জন্য বেশির ভাগ রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন।
২৮ এপ্রিল রাতে ১০০ শয্যা ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের জরুরী বিভাগ ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায় শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী রোগীদের ভীড়।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সিনিয়র সাব নার্স মেরী রিমি দিও বলেন, আমাদের এখানে প্রতিদিন ৯০ থেকে ১০০ জন্য ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হচ্ছে। হিসেব করলে ১৯ তারিখ থেকে এখন পর্যন্ত ১ হাজারের বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে। মূলত গত দুই মাস ধরেই এখানে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রথমে শিশুদের সংখ্যা বেশি ছিল। এখন সব বয়সের রোগীই আসছে। আমরা সাধ্যমতো তাদের সেবা দিতে চেষ্টা করছি।
আব্দুর রহমান নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, ‘‘আমার স্ত্রীর আজ সকাল থেকেই ঘনঘন বমি হইতাছিল। দুপুরে সে অনেকটা দুর্বল হইয়া যায়। একপর্যায়ে দেখি বিছানা থেকে উঠতে পারেনা, এমন অবস্থা। তাই দ্রুত তারে এখানে এনে ভর্তি করলাম। এখন তাকে স্যালাইন আর অন্যান্য ওষুধ দিসে ডাক্তার। দেখি কি হয়।’’
১০০ শয্যা হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক গোলাম মোস্তফা বলেন, মে, জুন ও জুলাই এই তিন মাসে গরম বেশি থাকায় স্বাভাবিক ভাবেই ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ে। তাছাড়া এখন জলবায়ু পরিবর্তন দূষিত পানি এবং বাইরের খাবারও ডায়রিয়া রোগী বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ। তাই আমি মনে করি সকলের উচিত ডায়রিয়া রোগ এড়াতে ভালো পনি ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা। আমরা সচেতন না হলে এটা আরো বাড়বে।
এদিকে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় সংকট দেখা দিয়েছে চিকিৎসা সরঞ্জামের। তাই অনেক রোগীর স্বজনদের হাসপাতালের বাহির থেকে ক্যানলাসহ অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম কিনে আনতে হচ্ছে।
অভিযোগ করে আশ্রাফুল ইসলাম নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, সরকারি হাসপাতালের নিয়ম হইতাছে সবকিছু এখান থেকাই দিবো। কিন্তু এই হাসপাতালে ওষুধ থেকে শুরু কইরা সব আমরাই কিনি। অতিরিক্ত বমি হওয়ার জন্য আজকে সন্ধায় ছোট মাইয়ারে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি করছি। কিন্তু সেলাইন দিতে যেই ক্যানলা লাগে। সেটা এখানে নাই। তাই ২০০ টাকা দিয়া বাহির থেকা কিন্না আনলাম। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হইয়া যারা যারা আসতাছে। সবাই বাহির থেকা ক্যানলা আর ইনজেকশন কিন্না আনতাছে। আসলে এটা নামেই সরকারি হাসপাতাল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক নার্স বলেন, আমাদের এখানে রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। বিপরীতে চিকিৎসা সরঞ্জামের সরবরাহ কম। তাই রোগীদের ক্যানলা ও বেশ কয়েকটি চিকিৎসা সরঞ্জাম আমরা বাহির থেকে কিনে আনতে বলছি।