শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৭ পূর্বাহ্ন

শীঘ্রই দেখা মিলছে না নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি

স্টাফ রিপোর্টার
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ১ মে, ২০২৩
  • ১১৭ বার পড়া হয়েছে

ফলে শীঘ্রই দেখা মিলছে না নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি। সেই সাথে ওয়ার্ড কমিটিগুলোও আর সফলতার মুখ দেখছে না। এর আগেও আনোয়ার হোসেন কমিটি দিতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারেনি। এবারও কমিটি ঘোষণা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আর এভাবেই যেন বছরের পর বছর ধরে আটকে থেকে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের থানা ওয়ার্ড কমিটিগুলো।

দলীয় সূত্র বলছে, অনেকদিন ধরেই নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটি আটকে ছিল। দীর্ঘ প্রায় ১৯ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করেও সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা এসকল ওয়ার্ডের কমিটি গঠন করতে পারছিলেন না। প্রতিবারই তাঁরা কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গিয়ে তাঁরা সফল হতে পারছিলেন না। এবার কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের চাপের মুখে পড়ে ওয়ার্ড কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেন।

সেই সাথে গত ৮ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভায় সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা প্রত্যেক ওয়ার্ডের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা দেন। সেই সাথে প্রত্যেক ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নাম ঘোষণা করেন। আর প্রত্যেক ওয়ার্ডে পদাধিকার বলে দায়িত্বে ছিলেন সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা।

তারই ধারবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের শহর ও বন্দরের ১৮টি ওয়ার্ড সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। সবশেষ ১১ ফেব্রুয়ারি সরকারি তোলারাম কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের ১৩নং ওয়ার্ডের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওয়ার্ডে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের মধ্যে শহরের ৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৬ জনের স্থলে ১০ জন ও বন্দরের ৯টি ওয়ার্ডের ১৮ জনের স্থলে ১ জনকে নির্বাচিত করতে পেরেছেন মহানগরের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা।

জানা যায়, ১৩ জানুয়ারি থেকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের ১৮টি ওয়ার্ড সম্মেলন শুরু হয়। ২৬ ও ২৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে প্রথম সম্মেলনের পতাকা তুলেন। সেখানে ওই অনুষ্ঠানে ২৬নং ওয়ার্ড সভাপতি মেছবাহউদ্দিনকে ছাড়া কাউকে ঘোষণা ছাড়া সম্মেলনের অতিথিরা চলে আসেন।

এনিয়ে শুরু থেকে বিতর্কে পড়ে যান মহানগরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তাদের মধ্যে শক্তিশালী সংগঠক না হওয়ায় এমন ঘটনার শিকার হতে হয়েছে বলে নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন। কোন কাউন্সিলর তালিকা ছাড়াই সম্মেলনগুলো করেছেন মহানগরের নেতারা। এটা কোন নিয়মে ছিল না দলের গঠনতন্ত্রে।

শহরে অঞ্চলে ১১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ এখানো ঘোষণা হয়নি। সেখানে সেলিম আহম্মেদ হেনা ও কামাল হোসেনের মধ্যে ঝিমিয়ে আছে। এই ওয়ার্ডে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন।

১২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন অস্ত্রধারী নিয়াজুল ইসলাম খান ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। ১৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে রয়েছেন রবিউল হোসেন ও হারুণ অর রশিদ। সেক্রেটারী পদে রয়েছেন সাখাওয়াত হোসেন সুমন ও শামীম খাঁ।

১৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন এম এ পারভেজ ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির। ১৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রহিম ও সাধারণ সম্পাদক প্রতীক ঘোষাল পাল। ১৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সেক্রেটারী পদে ঘোষণা হয়নি। এই ওয়ার্ডে সভাপতি পদে মনোয়ার হোসেন মনা ও সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম চঞ্চলের নাম শোনা যায়। ১৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে আনিস মাহমুদ ও আব্দুর মন্টু প্রার্থীতায় রয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন আসাদউল্লাহ। ১৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন কামরুল হাসান মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক কবির হোসাইন।

এদিকে শহর ও বন্দর এলাকায় কয়েকটি ওয়ার্ডের নাম ঘোষণা হলেও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় যেতেই পারেননি আনোয়ার হোসেন। কারণ সেখানে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে শামীম ওসমান। তিনি যেভাবে যখন চাইবেন ঠিক সেভাবেই সে সময় কমিটি গঠন করতে হবে। এর বাইরে যেন যাওয়ার সুযোগ নেই আনোয়ার হোসেনের।

এভাবে দীর্ঘদিন পর সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও খোকন সাহা সম্মেলনের আয়োজন করলেও তাঁরা পুরোপুরি প্রাপ্তি নিয়ে ঘরে ফিরতে পারেননি। সেই সাথে এই অপ্রাপ্তির মধ্যেই সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও খোকন সাহার মধ্যে বিরোধ শুরু হয়ে গেছে। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সঙ্গ ত্যাগ করে আসছেন।

সঙ্গ ত্যাগ করার পাশাপাশি এবার তাঁরা একে অপরের শত্রু হিসেবেও নিজেদের আবির্ভাব করছেন। গত ১৪ এপ্রিল মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২২নং ওয়ার্ডের আয়োজনে অসহায় মানুষের পাশে ঈদ সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা।

আর এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে খোকন সাহা বলেন, আনোয়ার ভাই বলেন পঁচাত্তরের পর তিনি জেল খেটেছেন। পঁচাত্তরের পরে তো অনেকেই জেল খেটেছে। কে কী পেয়েছে। নেত্রী তাকে সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছে। আপনি অনেক পেয়েছেন। যারা পায়নি তাদের সুযোগ করে দেন। তিনি দলটিকে বিশ টুকরো করেছেন। আজ তিনি নৌকা মার্কা চান। তার দেখাদেখি অনেকেই পোস্টার লাগাচ্ছে। আনোয়ার ভাইয়ের জন্য আমরা অনেক কিছু করেছি। তাকে সিটি করপোরেশনের মেয়র করার জন্য কাজ করেছি। চন্দন শীলের সেক্রিফাইসে তিনি ২০১৬ সালে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হলেন। কষ্ট লাগে যখন আনোয়ার ভাই পদের জন্য তার কমিটির এক নম্বর সদস্যকে খুনি হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি দল ভাঙার মিশন নিয়ে নেমেছেন।

অথচ এর আগে সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা একমঞ্চে থেকে বক্তব্য রেখেছেন। তাঁরা একে অপরকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন।

২০২১ সালে শহরের দুই নং রেলগেইট এলাকার আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে পাশাপাশি বক্তব্য রাখতে গিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ান হোসেন বলেছিলেন, খোকন সাহা বয়সে আমার অনেক ছোট। তারপরেও খোকন সাহার আমার কোনো দ্বন্দ্ব নাই। আমরা ঐক্যবদ্ধ রাজনীতি করতে চাই। ভুল ত্রুটি থাকাটাই স্বাভাবিক। আমি মানুষ ফেরেশতা না। আলাপ আলোচনা করে সমাধান করবো। এই দলের জন্য আমার অনেক শ্রম রয়েছে খোকন সাহার অনেক শ্রম রয়েছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে শহর ও মহানগর আওয়ামী লীগ করে আসছি। আগামী লড়াই সংগ্রামে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানাই।

সেদিন সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা বলেছিলেন, আমরা চাই নেত্রীর কাছে কোনো হাইব্রিড নয় তৃণমূল থেকে যারা ৭৫ এর পরে কোনো আপোস না করে দলের জন্য কাজ করেছে তাদেরকে মূল্যায়ন করবেন। আমি বিশ্বাস করি নেত্রী আগামীতে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করবেন না। আমাদের চাওয়ার পাওয়ার কিছু নেই। শুধু চাই নেত্রীর সমর্থন। শুধু চাই নেত্রীর কাছে মূল্যায়ন। আনোয়ার ভাই আমি সকলেই চাই। আমি বিশ্বাস করি নেত্রী আমাদের মূল্যায়ণ করতে ভুল করবেন না।

তার আগে, ২০১৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে তৎকালীন শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহাকে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণা করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর মহানগর আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।

আর এই কমিটি গঠনের প্রায় ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের অধীনে থাকা ওয়ার্ড কমিটিগুলো গঠন করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। মাঝে মাঝে কমিটি গঠন নিয়ে আলাপ আলোচনা শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত সেটা আর সফলতার মুখ দেখে না। নানা জটিলটায় বারবার আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগ। এখনও সেই জটিলতায় আটকে থেকেই যাচ্ছে ওয়ার্ড কমিটিগুলো। সহসাই আর দেখা মিলছে না মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি।

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আজকের নামাজের সময়সুচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৫:০২ পূর্বাহ্ণ
  • ১১:৪৭ পূর্বাহ্ণ
  • ১৫:৩৬ অপরাহ্ণ
  • ১৭:১৫ অপরাহ্ণ
  • ১৮:৩১ অপরাহ্ণ
  • ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ
©2020PrintNarayanganj  All rights reserved
Design by: POPULAR HOST BD
themesba-lates1749691102
%d bloggers like this: