প্রিন্ট নারায়ণগঞ্জ: একটি কারখানা থেকে ১০ লাখ টাকার জাল স্ট্যাম্প জব্দ করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি। সেই কারখানার মালিককে গ্রেপ্তার করা হয়নি, আনা হয়নি অভিযোগপত্রের এজহারেও।
অথচ, সেই কারখানার এক শ্রমিক কারাগারে জেল খাটছে। বেতনের অনিশ্চয়তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে অন্য কর্মচারী আর শ্রমিকরা।
ঘটনাটি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পঞ্চবটির শান্তিনগর বাজার এলাকার বায়োজিদ ফ্যাশন লিঃ নামের পোশাক কারখানায়।
পোশাক কারখানার শ্রমিক মেহেদী হাসান কর্মরত অবস্থায় গেল মাসের ১২ এপ্রিল বিকেলে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কারখানার একটি কক্ষ থেকে জাল স্ট্যাম্প উদ্ধার দেখিয়েছে। অথচ, কারখানার মালিককে আসামী করা হয়নি সেখানে।
কারখানার শ্রমিক ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে, বায়োজিদ ফ্যাশন নামের ওই পোশাক কারখানার মালিক রাজিব। বর্তমানে তিনি দুবাই পারি জমিয়েছেন। গেল বছর ওই কারখানা প্রতিষ্ঠায় শান্তিনগর বাজার এলাকার হাসিব আহসান মাসুমের ঘর টিন সেটের তৈরি ঘরটি ভাড়া নিয়ে ছিলেন তিনি। সেখানে বানো হতো রাজধানীর বঙ্গ বাজারসহ বিভিন্ন পাইকারি মার্কেটের তৈরি পোশাক।
হাসিব আহসান মাসুম বলেন, কারখানার অন্তরালে রাজিব কোন অবৈধ ব্যবসা চালাতেন কিনা তা যেমনি আমরা জানি না তেমনি কারখানার শ্রমিকরা জানতে না। কারণ বায়োজিদ ফ্যাশনের প্রবেশ পথ রাস্তার পাশে। কারখানার দেয়াল ঘেঁষে অপর পাশে আমার বাড়ির পথ। সেখানে পরিবার নিয়ে আমার বসবাস। অন্যান্য কারখানার মতো এখানে শ্রমিকরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করতেন। তবে সম্প্রতি রাজিব বিদেশে চলে যান। এ কারণে কারখানাটি পরিচালনা করতেন আশরাফ । হঠাৎ করে সেদিন কয়েকজন ডিবি এসে কারখানার শ্রমিক মেহেদীকে ধরে নিয়ে যায়। ঈদের পর থেকে কারখানাও তালা বদ্ধ। শ্রমিকরা বেতনের জন্য এসে ঘুরে যায়। আমিও ঘর ভাড়া পাচ্ছি না।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে কারখানার শ্রমিক জীবন বলেন, এটি ছোট একটি কারখানা। পোশাক তৈরির পাশাপাশি উৎপাদন বিষয়ে সোহরাব, আমি, ও মেহেদী দেখতাম। পন্য বিক্রি ও তদারকির দায়িত্ব আশরাফ। ঘটনার পর কারখানার মালিক রাজিব তার লোক দিয়ে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে।
কারখানার আরেক নারী শ্রমিক সিনথিয়া আক্তার ইলমা বলেন, অন্যান্য শ্রমিকদের মতো প্রতিদিন কাজে আসতেন মেহেদী। কাজ শেষে সবার মতোই বাড়ি ফিরতেন। ঘটনার দিন কারখানা ছুটি হওয়ার সময় কারখানার ভেতরে ডুকেন কয়েকজন লোক। তাদের মধ্যে দুইজন গেঞ্জি পড়া ছিলো। বাকীরা ডিবি লেখা কটি পড়ে ভেতরে ডুকেন। এরপর কারখানায় কর্মরত অবস্থায় থাকা মেহেদীকে হ্যান্ডকাপ পড়ায়। হ্যান্ডকাপ পড়ানোর সময় মেহেদী কাপড় কাটার কাজ করছিলেন। তারপর কারখানা থেকে বের করে তাকে নিয়ে যায় কারখানারই পাশের গলির পশ্চিম দিকে। কিছুক্ষন পর সেখান থেকে বেড়িয়ে মেহেদীকে গাড়িতে তুলে চলে যায় তারা। ওই সময় গাড়িতে আরো কয়েকজন বসা ছিলো। যারা তখন কারখানায় কর্মরত ছিলেন সবাই এ ঘটনা দেখেছে।
ঘটনারপর জেলা কাউন্টার টেরেরিজম ইউনিটেরর পরিদর্শক খোকন চন্দ্র সরকার স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমেকে জানান, অসাধু একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে জেলা জুড়ে নকল বা জাল স্ট্যাম্প ও সীল ব্যবহার করে বাজার জাত করে আসছিল। বুধবার রাতে জাল স্ট্যাম্প প্রস্তাত করে বাজারজাত করার সময় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে ১১ লাখ ৫৪ হাজার ৩’শ টাকার জাল স্ট্যাপ ও বিভিন্ন লেখা সম্মলিত ৯টা জাল সীল।
এ ঘটনায় পাঁচজনকে আসামী করে মামলা করা হয়। যা ফতুল্লা থানার মামলা নং ৫৯(৪)২৩। মামলার আসামী করা হয়, সদর উপজেলার বক্তবলী রামনগর এলাকার হৃদয় হোসেন, রামনগর এলাকার মো. কাউসার, বন্দর লক্ষণখোলা এলাকার মেহেদী হাসান, পটুয়াখালীর বাউফল থানার আরিফ হোসেন চৌকিদার ও চাঁদপুরের মতলবের এমরান হোসেনকে।