প্রিন্ট নারায়ণগঞ্জঃ দু-এক দিনের মধ্যেই বাজারে যাচ্ছে সোনারগাঁয়ের লিচু। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় ও সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় এ বছর লিচুর ফলন কিছুটা কম হয়েছে। এ ছাড়া শিলা বৃষ্টির কারণে লিচুর ক্ষতি হয়েছে। এখানে সাধারণত তিন প্রজাতির লিচুর ফলন হয়। এগুলো হলো পাতি লিচু, কদমী লিচু ও বোম্বাই (চায়না-৩) লিচু। আবহাওয়ার বৈশিষ্ট্যের কারণে সোনারগাঁয়ের লিচু আগে পাকে। প্রতিবছর মে মাসের প্রথমদিকেই লিচু বাজারে যায়। প্রথম পাতি জাতের লিচু, পরে কদমী জাতের লিচু ও সর্বশেষ বোম্বাই জাতের লিচু পেকে থাকে। আকারে বড় ও সুস্বাদু হওয়ায় অনেকে এ অঞ্চলের লিচুকে ‘দিল্লিকা লাড্ডু’ বলে থাকেন।
উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার খাসনগর, চিলারবাগ, দৈলরবাগ, পানাম, নোয়াইল, দত্তপাড়া, বাগমুছা, অর্জুন্দী, হাতকোপা, দরপত, ছাপেরবন্ধ, গোয়ালদী, টিপরদী, হরিষপুর, ভট্টপুর, লোকশিল্প জাদুঘর, গোবিন্দ্রপুর, গাবতলী, হারিয়া, বৈদ্যেরবাজার, তাজপুর, সাদীপুর, ইছাপাড়া, দুলালপুর, বারদী, সেনপাড়া, বালুয়া দিঘীরপাড়সহ ৫০টি গ্রামে দুই শতাধিক লিচু বাগান রয়েছে। এসব বাগানে প্রতিবছর পাতি লিচু, কদমী লিচু ও বোম্বাই (চায়না-৩) লিচুর ফলন হয়ে থাকে। বাগান ছাড়াও অনেকে বাড়ির অঙিনায় ও কৃষি জমির পাশে লিচু চাষ করছেন। গত ৪ বছর ধরে এখানকার চাষিরা পাতি লিচু (প্রতি হাজার) ৩ হাজার টাকা, কদমী লিচু (প্রতি হাজার) ৬ হাজার টাকা ও বোম্বাই লিচু (প্রতি হাজার) ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করে আসছেন।
শনিবার সোনারগাঁওয়ের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চাষিরা লিচু বাগানে পাহারা দিচ্ছেন। কাক, বাঁদুর, চামচিকা ও চোরের হাত থেকে লিচু রক্ষা করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তাঁরা। এ কাজে চাষিদেরকে পরিবারের সদস্য ও শ্রমিকরা সহযোগিতা করছেন। অনেক চাষি গাছ থেকে লিচু ছিঁড়ে বাজারে বিক্রি করার জন্য টুরকি, বাঁশ, রশি ও বিভিন্ন সরঞ্জাম সংগ্রহ করছেন। যাতে লিচু একসঙ্গে আঁটিবাঁধা ও প্যাকেট করতে সুবিধা হয়।
দরপত গ্রামের লিচু ব্যবসায়ী লিটন মুছা জানান, আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় অনেক লিচু ঝরে পড়েছে। তাছাড়া আকারে ছোট হয়েছে।
সোনারগাঁ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এখানকার চাষিরা লিচু পাকানের জন্য কিটনাশক প্রয়োগ করেন না। তবে ছত্রাকনাশক ও পোকার উপদ্রব বন্ধ করার জন্য কিটনাশক প্রয়োগ করে থাকেন। এ ছাড়া লিচু বড় করার জন্য হরমন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করেন। এসব কিটনাশক মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলার কথা নয়। যদি পরিমাণে বেশি প্রয়োগ করা হয়, তাহলে অবশ্যই তা ক্ষতিকর।
সাহিত্যিক ও গবেষক শামসুদ্দোহা চৌধুরী জানান, সোনারগাঁয় পর্তুগিজদের আগমনের পর অর্থাৎ ১৭’শ শতক থেকে লিচুর চাষ শুরু হয়। পর্তুগিজরাই এখানে প্রথম লিচু চাষ শুরু করে। প্রথমে ছোট পরিসরে চাষ হলেও এখন তা ব্যাপক রূপ নিয়েছে। লিচু ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় প্রতিনিয়ত জমির মালিকরা নতুন নতুন লিচুর গাছ রোপণ করছেন।
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেজওয়ান-উল-ইসলাম জানান, এখানকার লিচু আকারে বড় ও সুস্বাদু। এ বছর ফলন ভালো না হওয়ায় অনেক চাষিকে লোকসান গুনতে হতে পারে।