শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০৮ পূর্বাহ্ন

তারা কাউকেই কেয়ার করে না!

স্টাফ রিপোর্টার
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ৯ মে, ২০২৩
  • ২১৭ বার পড়া হয়েছে

প্রিন্ট নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী ও সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি হলেন জাকির খান। দীর্ঘ দুই দশক ধরে আত্মগোপনে থেকে বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন। আর এই দীর্ঘ বছর ধরে অনুপস্থিত থেকেও তিনি তার আধিপত্য বজায় রেখেছেন। এখনও তার নামে এলাকার ‘পাতি নেতাদের’ মহড়া চলে। রয়েছে অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণ। এখনও তাকে আদালতে আনা হলে তার অনুসারিদের মহড়া পরিলক্ষিত হয়। বিভিন্ন এলাকার অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রকদের আদালতপাড়ায় দেখা মিলে। পুলিশের সামনেই তারা তাদের শক্তি প্রদর্শন করেন।

বর্তমানে আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী জাকির খানের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের আলোচিত হত্যাকাণ্ড ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। আর এই সাক্ষ্যগ্রহণের সময়ে নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় তার অনুসারীদের ব্যাপক শোডাউন দেখা যায়। কখনও কখনও তারা নিজেরা নিজেরাই কিংবা সাধারণ মানুষজনের সাথে মারমুখী আচরণে লিপ্ত হয়ে থাকেন। যেন কাউকেই তারা কেয়ার করেন না। সকলের প্রতিই ড্যামকেয়ার ভাব দেখিয়ে থাকেন তার অনুসারীরা।

সবশেষ ৭ মে দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক উম্মে সরাবন তহুরার আদালতে শীর্ষ সন্ত্রাসী জাকির খানের পক্ষে আইনজীবীরা সাব্বির আলম খন্দকারের বড় ভাই তৈমূরকে জেরা করেছেন। একই সময়ে আদালতে জাকির খানের জামিন চাইলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেন। সেই সাথে আগামী ১৩ জুলাই পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত।

আর এদিন নারায়ণগঞ্জ আদালতে জাকির খানের উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই তার অনুসারিরা আদালতপাড়ায় উপস্থিত হন। শহরের বিভিন্ন এলাকার যত ‘ছিঁচকে সন্ত্রাসী’ প্রকৃতির লোকজন রয়েছে সকলেই উপস্থিতি দেখা যায় নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায়। সেই সাথে আদালপাড়ার বিভিন্ন এলাকায় তারা অবস্থান নেয়। তাদের সামাল দিতে গিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বারবার হিমশিম খেতে হয়। জাকির খান আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে বারবার স্লোগান দেয়ার চেষ্টা করে পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে তোলার চেষ্টা হয়।

সেই সাথে পুলিশি প্রহরাতেও জাকির খানকে বেশ খোশমেজাজে দেখা যায়। পুলিশের প্রিজন ভ্যানে থেকে হাসিমুখে অনুসারীদের হাত নেড়ে স্বাগত জানান। জাকির খানকে স্বাগত জানাতে দেখেও তার অনুসারীরাও উল্লাস প্রকাশ করেন। কারাগার যেন তার কাছে কিছু না। সাময়িক সময়ে কারাগারে গেছেন যে কোনো সময় বের হয়ে আসবেন এমন একটা ভাব পরিলক্ষিত হয়ে থাকে তার মাঝে।

আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে মামলার বাদী ও নিহত সাব্বির আলম খন্দকারের ভাই বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, এই মামলা ছাড়াও জাকির খান আরও দুটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। হাইকোর্ট একটি মামলায় তার আট বছরের সাজা বহাল রেখেছেন। তার যে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, সে বাইরে থাকলে সাক্ষীরা আসতে ভয় পাবেন।

এ বিষয়ে ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খন্দকারের মেয়ে অ্যাডভোকেট খন্দকার ফাতেমা-তুজ-জোহরা সবনম বলেন, যারা কোর্টে আসে তাদের দেখলেই বুঝা যায় তারা কোনো ক্যাটাগরির মানুষ। তারা দলের প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে আসে না। ছোট ছোট কিশোরদের নিয়ে আসা হয় কোর্টে। আমাদের ভীত করার জন্যই ভয় সৃষ্টি করার জন্যই যেন সাক্ষীরা না আসে সাক্ষীরা যেন কোর্টে সাক্ষী দিতে না পারে তারা বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপ করছে।

তিনি আরও বলেন, আমি আইনজীবী হিসেবে কোর্টে আসছি। কিন্তু সাধারণ একজন মানুষ যিনি আইনজীবী না মানুষের এত ভীড় দেখে যে অভ্যস্ত না তিনি অবশ্যই ভীত হবে। কে আসবে সাক্ষী দিতে? তাদের কোনো নিরাপত্তা দেখছি না। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য যারা আছেন তাদের উদ্দেশ্য বলবো নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা উচিত। যদি নিরাপত্ত না থাকে তাহলে সাক্ষীরা আসবেন কিভাবে?

সূত্র বলছে, ১৯৮৯ সালে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের হাতে ধরে জাতীয় পার্টির ছাত্র সমাজে যোগদানের মাধ্যমেই জাকির খানের রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ করেন। তার পিতা দৌলত খান ছিলেন তৎকালীন টানবাজার পতিতালয়ের গডফাদার। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর জাকির খানের সাথে নাসিম ওসমানের বিরোধ বাধলে কামালউদ্দিন মৃধার নেতৃত্বে সে ১৯৯৪ সালে বিএনপিতে যোগ দেয়।

এক পর্যায়ে দেওভোগ এলাকার অপর শীর্ষ সন্ত্রাসী দয়াল মাসুদকে শহরের সোনার বাংলা মার্কেটের পেছনে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে দুধর্ষ হিসেবে শহরে পরিচিত হয়ে উঠেন জাকির খান। ১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের শেষ দিকে জাকির খান শহরের খাজা সুপার মার্কেটে হামলা ও ভাঙ্গচুরের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ড প্রাপ্ত হয়ে জেলে যায়। একই বছরে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার ৭ মাসের মাথায় কাশীপুর বাংলা বাজার এলাকায় এক ঠিকাদারের কাছে চাঁদা দাবীর অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় দ্বিতীয় দফায় জাকির খানের ৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ড হয় এবং জেলে যায়।

১৯৯৯ সালে স্বল্প সময়ের জন্য জেল থেকে বের হয়ে জাকির খান জেলা ছাত্রদলের সভাপতির পদটি পেয়ে যান। আওয়ামীলীগের শাসনামলের শেষ দিকে ২০০০ সালে শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ থেকে টানবাজার ও নিমতলী পতিতালয় উচ্ছেদ করে। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরও প্রায় ৫ মাস জেলে থাকেন জাকির খান। ওই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর শহরের ডিআইটিতে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় যেখানে জনতার ঢল নামে।

সর্বশেষ ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী তৎকালীন জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক ও বিআরটিসির তৎকালীন চেয়ারম্যান তৈমুর আলম খন্দকারের ছোট ভাই ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খন্দকার আততায়ির গুলিতে নিহত হয়। এ ব্যাপারে জাকির খানকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন তৈমুর আলম খন্দকার। এর পর জাকির খান নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে পাড়ি জমায় থাইল্যান্ডে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিলেন। তবে পরিচয় গোপন করে গত এক বছর সপরিবার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বসবাস করছিলেন। পরে গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর ভোরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এর আগে সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ২০০৬ সালের ৮ জানুয়ারি আদালতে জাকির খান, তার দুই ভাই জিকু খান, মামুন খানসহ মোট ৮ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলার প্রধান আসামি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিনকে মামলা থেকে বাদ দেওয়ায় মামলার বাদী তৈমুর আলম খন্দকার সিআইডির দেওয়া অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২৪ জানুয়ারি আদালতে নারাজি পিটিশন দাখিল করেন। পরে অক্টোবর মাসে তৈমুর আবার এ নারাজি প্রত্যাহার করে নেন। তবে এই মামলায় অনেকদিন ধরে সাক্ষীরা আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসছিলেন না বিচার কার্যক্রমে স্থবিরতা ছিলো বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।

তার আগে ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সাব্বির আলম খন্দকার খুন হওয়ার পর এ মামলার আসামি হওয়ায় তিনি নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে থাইল্যান্ডের সুকুমবিকে কয়েক কোটি টাকা দিয়ে ’গ্রেস’ নামে ৮তলা বিশিষ্ট একটি থ্রি-স্টার হোটেল কেনেন এবং সেখানেই বসবাস করছিলেন।

তবে র‌্যাব জানিয়েছিল গত এক বছর সপরিবার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বসবাস করছিলেন। পরে গত ৩ সেপ্টেম্বর ভোরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আজকের নামাজের সময়সুচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৫:০২ পূর্বাহ্ণ
  • ১১:৪৭ পূর্বাহ্ণ
  • ১৫:৩৬ অপরাহ্ণ
  • ১৭:১৫ অপরাহ্ণ
  • ১৮:৩১ অপরাহ্ণ
  • ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ
©2020PrintNarayanganj  All rights reserved
Design by: POPULAR HOST BD
themesba-lates1749691102
%d bloggers like this: