প্রিন্ট নারায়ণগঞ্জঃ নারায়ণগঞ্জ এর আলোচিত একাধিক মামলার আসামী সাবেক কাউন্সিলর দুলাল প্রধান বিদেশে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন চলতি মাসেই। একাধিক মামলা মোকাবেলা এবং পদ পদবী হারিয়ে কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন তিনি। এমন অবস্থায় পিঠ বাঁচাতে ২৪ আগস্ট কানাডার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাবেন বলে নিশ্চিত করেছে একটি সূত্র।
দুলাল অনুসারীরা জানান, সাবেক কাউন্সিলর সাইফুদ্দিন আহম্মেদ দুলাল প্রধানের বিরুদ্ধে মাদক, হত্যা, প্রতারণা ও চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। যার মধ্যে এসপি হারুন থাকাকালে ফেনসিডিল সহ গ্রেপ্তার হওয়া, তারই বন্ধু রহিম হাওলাদারের বাড়ি দখল করে নেয়া অন্যতম। এই দুটো বিষয় বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছিলো শহরজুড়ে। নাসিক নির্বাচনের আগে থেকেই তার পতন শুরু হলে সেই ধাক্কা আর সামলাতে পারেননি দুই বছরেও। সম্প্রতি দুলালের দেশ ত্যাগের বিষয়টি গুঞ্জন চলছিলো। তবে এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন ছিলো অনেকের মনেই। তবে দুলালের কানাডা গমন সংক্রান্ত টিকেট এবং ভিসার কাগজ হাতে এসে পৌঁছেছে। সেই কাগজপত্র যাচাই করে দেখা যায় দুলাল চলতি মাসের ২৪ তারিখ কানাডার টরেন্টো উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন। ইতোমধ্যে বিমানের টিকিট এবং ভিসা প্রস্তুত করে ফেলেছেন তিনি।
ভিসার সূত্র বলছে, গত মার্চ মাসের ১৩ তারিখ তিনি কানাডায় যাবার ভিসা লাভ করেন। যার মেয়াদ রয়েছে ২০৩২ সালের মার্চ পর্যন্ত। অন্যদিকে কানাডার টরেন্টোতে যাবার জন্য ইতোমধ্যে ২৪ তারিখের বিমান টিকেট সম্পন্ন করেছেন তিনি।
টিকেট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কাতার এয়ারওয়েজের ইকোনোমি ক্লাসের টিকেট বুকিং করেছেন তিনি। এদিন রাত ৩টা ৩৫ মিনিটে এয়ারবাস এ ৩৩০-৩০০ নম্বরের বিমানটি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে দোহার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে।
দোহা থেকে কাতার এয়ারওয়েজের আরেকটি বিমান কানাডার মন্ট্রিয়ালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। বোয়িং ৭৭৭-৩০০ বিমানটির ইকোনমি ক্লাসে টিকেট কেটেছেন তিনি। পরবর্তীতে কানাডার মন্ট্রিয়াল থেকে টরেন্টোর উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন এয়ার কানাডার একটি বিমানে। টিকেট এবং ভিসায় তার নাম আহম্মেদ সাইফুদ্দিন হিসেবে উল্লেখ করা আছে। সাবেক এই কাউন্সিলর ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার বিদেশ যাত্রার কারন হিসেবে তার প্রতিপক্ষরা বলছেন, মামলা জনিত জটিলতা ও জেলে যাবার ভয়েই দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন দুলাল ।
সূত্র বলছে, নাসিক নির্বাচন চলাকালে আইভীর পক্ষে কাজ না করার অভিযোগে একে একে বিলুপ্ত করা হয় বেশ কয়েকটি কমিটি। তার মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক দলের মহানগর কমিটি বিলুপ্ত হয় যার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন দুলাল প্রধান। তবে তখনও কাউন্সিলর পদ হারাননি তিনি নির্বাচনে কাছাকাছি ভোট ব্যাবধানে পরাজিত হন এমপি পুত্র ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আবুল কাউসার আশার কাছে। মাত্র এক মাসেরও সময়ে দল এবং জনপ্রতিনিধিত্ব দুটোই হারিয়ে ফেলেন ।
টানা দুই বছর দুলাল অনেকটা নীরবেই থাকেন। মাঝে থেকে চাপ বাড়াতে থাকে তার কাছে প্রতারণার শিকার হওয়া ব্যক্তিরা। একাধিক মামলা দায়ের করা হয় তার বিরুদ্ধে ও তার সহযোগীদের নামে। ইতোমধ্যে তার কয়েকজন সহযোগী গ্রেপ্তার হয়েছেন বলেও জানা যায়। সবশেষ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনে পুনরায় পদ ফিরে পাবার স্বপ্ন দেখছিলেন তিনি। কিন্তু শেষতক সেই স্বপ্নও নস্যাৎ হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় তার প্রতারণার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের সাথে আপোষ করে নিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দুলাল।
এদিকে কানাডা যাবার খবরে মাথায় হাত পড়েছে দুলাল অনুসারীদের। দুলালের সাথে থেকে নানান অপকর্মের সঙ্গী ছিলেন যারা, তারা এবার নিজেদের পিঠ বাঁচাতে ছুটছেন দিকবিদিক। কেউ কেউ ফেঁসে যাচ্ছেন এসব মামলায়। আবার অনেকে জানেনই না দুলাল প্রধান যে কানাডায় যাচ্ছেন। কারণ তারা জানতে পারলে দুলালকে বিদেশ যেতে দিবেন না অনুসারীরা। এছাড়া জেনে যাওয়া অনুসারীদের আশ্বাস দেয়া হয়েছে, খুব দ্রুতই ফিরে আসবেন তিনি। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল নিজের অনুকুলে না আসলে ফেরার সম্ভাবনা নেই তার। সব মিলিয়ে দুলাল নিজে তার অনুসারীরা পালাবার পথ খুঁজছেন বলে মন্তব্য প্রতিপক্ষের।
কানাডা যাবার বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় সাইফুদ্দিন আহমেদ দুলাল প্রধানের সাথে। ব্যাক্তিগত নাম্বারে কল করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।