প্রিন্ট নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বিএনপির রাজনীতিতে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। ৫ আগস্টের পর থেকে থেমে থেমে চলছে বহিস্কার, পুনর্বহাল আর সংঘর্ষের ঘটনা। এতে কর্মীরা বেশ বিব্রত। নেতায় নেতায় বিরোধ আর বাকযুদ্ধে ভেতরের রাজনীতি এখন অগ্নিগর্ভ। আগে আওয়ামী লীগের সঙ্গে রাজনীতি করতে হতো বিএনপির। এখন বিএনপির ভেতরেই রাজনীতি চলে। নিজেদের তপ্ত আগুনে নিজেরাই পুড়ছে।
সবশেষ ফতুল্লার বক্তাবলী ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি বিলুপ্তের ঘোষণা এসেছে। থানা বিএনপির সহ সভাপতি সুলতান মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট বারী ভূইয়া সাক্ষরিত চিঠিতে কমিটি বিলুপ্তের ঘোষণা দেন ২০ অক্টোবর। এর দুইদিন আগে ১৮ অক্টোবর বক্তাবলীতে বিএনপির ব্যানারে সমাবেশ হয়। সে সমাবেশ আয়োজনে ছিলেন না সভাপতি আকবর আলী সুমন। এ নিয়ে তিনি সাংবাদিক সম্মেলনও করেছিলেন। সেদিন তিনি বলেছিলেন, জেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন সাহেব বক্তাবলীতে আসবে, এটা অত্যন্ত খুশির সংবাদ। আমরা নেতাকর্মীরা তার আগমন ঘিরে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় তার আগমনের সংবাদটি বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুনের মাধ্যমে জানতে পারি। আমাদের ইউনিয়নে তিনি আসবেন, অথচ ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক আকবর আলী সুমন, যুগ্ম আহবায়ক নজরুল ইসলাম প্রধান, স্বাগতিক ওয়ার্ডের বিএনপির সভাপতি সলিমুল্লাহ প্রধান জুয়েলসহ অন্যান্য ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি-সেক্রেটারিসহ স্থানীয় নেতাকর্মীদেরকে এ বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। এমনকি ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহীদুল ইসলাম টিটু ভাইও এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। জানতে পেরেছি আওয়ামী লীগের সাথে যারা আঁতাঁত করে চলেছে তাদের ডাকেই জেলা বিএনপির সভাপতি এখানে আসছেন। আমরা বিএনপির নেতাকর্মীরা এই সভা বর্জন করলাম।
মূলত এর পর পরেই বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা হয়। মূলত আকবর আলী সুমন হলেন বিএনপি নেতা শাহ আলমের অনুসারী। বক্তাবলীতে মূলত গিয়াসউদ্দিনের পক্ষে বিএনপির নেতৃত্ব দেন সাবেক ছাত্রদল নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান মিলন মেহেদী। সেখানে বিএনপির দুটি গ্রুপ।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পরদিন ৬ আগস্ট রিয়াদ চৌধুরীকে থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি ঘোষণা করেন থানা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি সুলতান মাহামুদ মোল্লা ও থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী ভূইয়া।
এরপর ৭ আগস্ট থানা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটু সংবাদ সম্মেলন করে জানান, থানা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদককে থানা কমিটির নেতারা বহিষ্কার কিংবা অব্যাহতি দেওয়ার এখতিয়ার রাখেন না। বারী ও সুলতানা মাহামুদ নিজেরাই দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন বলে দাবি করেছেন টিটু।
এদিকে বক্তাবলীর ঘটনার পর রবিবার টিটু জানান, যে পন্থায় বক্তাবলীর কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে সেটা গঠনতান্ত্রিক না। জেলা কমিটির নির্দেশে থানা কমিটি বহিস্কার বা বিলুপ্ত করতে পারে। কিন্তু এ ধরনের কোন সিদ্ধান্ত আমাদের জানানো হয়নি। জেলা কমিটিও জানে না। ফলে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে দলের ভেতরে অস্থিরতা ও বিভাজন চলছে।
এক সভায় ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটুকে নিয়ে বারী ভুঁইয়া বলেন, আমরা সবাই মিলে রিয়াদ চৌধুরীকে বহিষ্কার করলাম। উনি আইসা প্রত্যাহার করলেন! এইডা কি হইলো ভাই? আইন তো মানুষের জন্যই, মানুষের উপকারের জন্যই আইন। আমরা সকলের সম্মতিতে রিয়াদ চৌধুরীকে বহিষ্কার করেছি, উনি একটা কাগজ দেখাইয়া বললেন আমি তার বহিষ্কার প্রত্যাহার করলাম। আরে মিয়া তুমি নিজেই বহিষ্কার হইয়া যাইবা প্রস্তুত থাকো। থানা বিএনপি মূলধারার নেতৃত্বের মাধ্যমে চলবে। কোনো চাঁদাবাজ, ভূমিদস্যু চাঁদাবাজ আমাদের পায়ের নিচে পিষ্ট হয়ে মরে যাবে, তাদের দিয়ে থানা বিএনপি চলবে না।
এদিকে আব্দুল বারী ভূইয়া সম্পর্কে থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী বলেছেন, বয়স হলে মানুষ বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি হয়ে যায়। দলের মধ্যে থেকে সেক্রেটারি বারী ভূইয়া সাহেব যেভাবে বক্তব্য রাখছে, তা শোভনীয় নয়। আপনি যেভাবে বক্তব্য দিচ্ছেন মনে হচ্ছে যে বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যাকে এক করে ফেলবেন। ভুলে যাবেন না, আপনি কান্না করেছেন বলেই আমি সেক্রেটারি পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছি।
সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে টিটু বলেন, একটি মহল কাদা ছোড়াছুড়ি করছে। রিয়াদ চৌধুরীকে যেভাবে বহিস্কারের আদেশ দেওয়া হয়েছিল এটাই তার প্রমাণ। কিন্তু তারা জানে না যে, এভাবে বহিস্কার করা যায় না। থানা বিএনপির এক নেতা আরেক নেতাকে বহিস্কারের আদেশ দিতে পারে না। কেন্দ্রীয় নেতারাও এই বিষয়ে অবগত নন বলে আমাকে জানিয়েছে। কাজেই বহিস্কার করতে হলে গঠনতন্ত্রের বিষয়ে একটু খোঁজ নিয়েন যে প্রক্রিয়াটা কী।
গত ১১ সেপ্টেম্বর ফতুল্লায় প্রভাব বিস্তার নিয়ে বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষে গুলি ছোড়া হয়েছে।